এবার মহাকাশে ‘কথা বলার সুযোগ’ দেবে এআই
“আমি উত্তেজনা ও স্নায়ু চাপ অনুভব করছি,” সম্প্রতি একটি রকেট উৎক্ষেপণের আগে এমনই জবাব দিয়েছে এআই প্রযুক্তি।
জবাবটি এসেছে ‘হেরা স্পেস কম্প্যানিয়ন’ নামের এক এআই চালিত সহায়ক ব্যবস্থা থেকে, যা ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ’র হেরা মিশনে ব্যবহার করা মহাকাশযানের সঙ্গে ‘যোগাযোগ রক্ষার’ উদ্দেশ্যে তৈরি।
অক্টোবরে উৎক্ষেপণ করা এ নভোযান মহাকাশে বেশ কয়েক বছর সময় কাটাবে। হেরা মিশনটি একটি গ্রহ প্রতিরক্ষা প্রকল্পের অংশ, যেখানে পৃথিবীকে বিভিন্ন বিপজ্জনক গ্রহাণুর সম্ভাব্য আঘাত থেকে রক্ষা করা যায় কি না, সেটি মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে নকশা করা এটি।
“এর লক্ষ্য হল, সবাইকে এ মিশনের কাছাকাছি নিয়ে আনা ও পুরোপুরি নতুন উপায়ে তথ্য আহরণের সুযোগ দেওয়া,” বলছেন ইএসএ’র ‘হেড অফ মিশন’ ইয়ান কার্নেলি।
“এই প্রথম আমরা মাইক্রোসফট অ্যাজিউরের সঙ্গে মহাকাশযান থেকে পাওয়া ডেটার সরাসরি সংযোগ ঘটিয়েছি। ফলে, ব্যবহারকারীরা সক্রিয়ভাবেই মহাকাশযানে যোগাযোগ করার সুযোগ পাবেন, যেখানে প্রায় ‘রিয়েল-টাইমেই’ এর বিভিন্ন অনুসন্ধান দেখা যাবে। এমনকি মিশনের পর্দার আড়ালের বিভিন্ন ঘটনাও দেখার সুযোগ মিলবে এতে,” ব্যাখ্যা করেছেন মাইক্রোসফটের জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তি কৌশলবিদ জর্জ লিটগেব।
এআই ব্যবস্থাটি তাৎক্ষণিক ও বিস্তারিত জবাব দিতে সক্ষম। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে ‘বিস্তৃতি ও বিচ্ছিন্নতা উভয়ই একইসঙ্গে ভয়ংকর ও অনুপ্রেরণার উৎস’। এ ছাড়া, ‘অজানা বিশাল কোনো জায়গায় পা রাখার অনুভূতি কেমন’ সে বিষয়টিও উঠে আসে এর ব্যাখ্যায়।
“আমি সবসময় মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, এমন প্রযুক্তির স্বপ্ন দেখেছি, যেটি অনেকটা ‘স্টার ট্রেক’ ধাঁচের হবে। কিন্তু এ প্রযুক্তি প্রস্তুত হয়ে ওঠার জন্য আমাকে এতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন আমরা ওই অভিজ্ঞতার কাছাকাছি কিছু একটা পেয়েছি,” বলছেন এই প্রকল্পের নির্মাতা কোম্পানি ‘টেরা মেটার স্টুডিও’র নির্বাহী প্রযোজক মার্কাস মুসলেচনার।
চ্যাটবটে একটি ‘পরিমাপক ব্যবস্থা’ও আছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী ইএসএ’র বিশেষ ডেটা, মহাকাশযানের গতি এবং উচ্চতা পরিবর্তনের মতো ঘটনা দেখার সুযোগ পাবেন।
নির্মাতারা বলছেন, ২০২৫ সালের মার্চে অবিস্মরণীয় একটি মুহুর্ত দেখা যেতে পারে, যখন মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাবে। এমনকি এআই সহায়ক ব্যবস্থা থেকে তখন মহাকাশযানের ক্যামেরায় তোলা গ্রহটির বিভিন্ন রিয়েল-টাইম ছবি দেখা যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
হেরা স্পেস কম্প্যানিয়নের মতো ‘বিশেষজ্ঞ চ্যাটবটের’ সঙ্গে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা কীভাবে মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে, তা ব্যাখ্যা করেছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি’র নিউরোসায়েন্স ও মনোবিদ্যার অধ্যাপক মাইকেল গ্রাজিয়ানো।
“একটা প্রশ্ন অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন। তা হল, অত্যাধুনিক চ্যাটবটটি কি আসলেই সচেতন?”, বলেন তিনি।
“এর ডেটা দেখাচ্ছে, চ্যাটবটটি যত আধুনিক হতে থাকবে, লোকজনের কাছে এটি ততই সচেতন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকুক, বা না থাকুক।”
তথ্যসূত্র :- টেলিগ্রাফি, ফ্রেএথিনক