জাপান নতুন প্রজন্মের (এআই) প্রযুক্তি নির্ভর "জেটা-ক্লাস" সুপার কম্পিউটার তৈরি করতে যাচ্ছে!
জাপান সাম্প্রতিক সময়ে অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন প্রজন্মের (এআই) প্রযুক্তি নির্ভর "জেটা-ক্লাস" সুপার কম্পিউটার তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। যা কিনা বর্তমানে প্রচলতি বিশ্বের যে কোন শক্তিশালী সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম অপেক্ষা কমপক্ষে এক হাজার গুণ দ্রুত গতিতে এবং নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন জাপানের প্রযুক্তিবিদেরা। দেশটি তাদের ভবিষ্যতের এই হাইস্পিড সুপার কম্পিউটারের নাম দিয়েছে ‘ফুগাকু নেক্সট’ সুপার কম্পিউটার।
জাপান পরিকল্পনা মাফিক এক উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টের আওতায় ‘ফুগাকু নেক্সট’ সুপার কম্পিউটার তৈরির কাজ আসন্ন ২০২৫ সাল থেকে শুরু করবে এবং এটি খুব সম্ভবত আগামী ২০৩০ সালের দিকে পুরোপুরি ব্যবহার যোগ্য অবস্থায় চালু করার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী তাঁরা। বর্তমানে এটির ডিজাইন তৈরিতে যৌথভাবে কাজ করছে জাপানের বিখ্যাত টেক জায়ান্ট কোম্পানি ফুজিৎসু এবং রিকেন রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এর আগে গত ২০২০ সালে এই দুই টেক জায়ান্ট কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করে ‘ফুগাকু’ সুপার কম্পিউটার এবং এটি গত ২০২১ সালে ব্যবহারের জন্য চালু করা হয়।
আর বর্তমানে অপারেশনাল থাকা জাপানের ‘ফুগাকু’ সুপার কম্পিউটারের গতি হচ্ছে বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে ৫৩৭.২১ পেটাফ্লপস (আরপিক)। যা কিনা গত ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাছাড়া চলতি ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের ৬ষ্ঠ শীর্ষ স্থানীয় সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম হচ্ছে ‘ফুগাকু’ সুপার কম্পিউটার। এটিকে জাপানের ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল রিসার্চ (রিকেন) এ স্থাপন করা হয়।
তবে গত নভেম্বরের টপ৫০০ এর র্যাংকিং অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় এবং শক্তিশালী সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আমেরিকার তৈরি ইআই ক্যাপ্টেন সুপার কম্পিউটার। আর এই (Hewlett Packard Enterprise El Capitan) সুপার কম্পিউটারের গতি হচ্ছে কিনা অবিশ্বাস্যভাবে প্রতি সেকেন্ডে ২.৭৪৬ এক্সা-ফ্লপস বা ২,৭৪৬.৩৮ পেটা-ফ্লপস (আরপিক)। এটিকে আমেরিকার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (LLNL) ইনিস্টিটিউটে স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে জাপানের নতুন এই উচ্চাভিলাষী "জেটা-ক্লাস" কম্পিউটিং সিস্টেম প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ব্যয় হতে পারে (প্রাক্কলিত) আনুমানিক মোট ৭৬১ মিলিয়ন ডলার। জাপানি প্রযুক্তিবিদদের ভাষ্যমতে, নতুন প্রজন্মের এই সুপার কম্পিউটারের গতি হবে কিনা কমপক্ষে প্রায় ১ জেটা-ফ্লপস (zetaFLOPS) পর্যায়ের। যেখানে ১ হাজার এক্সা-ফ্লপস (এফএলওপিএস) বা floating point operations per second (FLOPS) সমান ১.০ জেটা-ফ্লপস (zetaFLOPS) গতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে (এফএলওপিএস) অর্থ হচ্ছে ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড।
বর্তমানে সারা বিশ্ব প্রচলিত থাকা কোন হাইস্পিড সুপার কম্পিউটার এখনো পর্যন্ত জেটা-ফ্লপস গতি অর্জন করতে পারেনি। তবে বিশ্বের প্রথম শক্তিশালী এক্সা-স্কেল সুপার কম্পিউটার হিসেবে গত ২০২২ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে আমেরিকার 'ফ্রন্টিয়ার' সুপার কম্পিউটিং সিস্টেম। যা চলতি ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার নিজের স্থান দখল করে রাখে।
মূলত আমেরিকার Hewlett Packard Enterprise (এইচপি) কোম্পানির তৈরি উচ্চ প্রযুক্তির 'ফ্রন্টিয়ার' অ্যাডভান্স কম্পিউটিং সিস্টেম বা সুপার কম্পিউটারের গতি হচ্ছে কিনা প্রতি সেকেন্ডে (Rpeak) রেট ২.০৫৫ এক্সা-ফ্লপ (এফএলওপিএস) স্পিড। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি-তে স্থাপন করা হয়। তাছাড়া টপ৫০০ এর হালনাগাদ রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় এবং শক্তিশালী ১০টি সুপার কম্পিউটারের মধ্যে ৫টি দখল করে রেখেছে আমেরিকা।
তথ্যসূত্র: নেক্সট বিগ ফিউচার, এক্সট্রিম টেক, উইকিপিডিয়া, টপ৫০০।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com