প্রযুক্তির গোপন শক্তি: বিরল পৃথিবীর উপাদান ও প্রোমেথিয়াম রহস্য উদঘাটন

আজকের আধুনিক প্রযুক্তি জগতে, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থেকে মহাকাশ গবেষণা—সবখানেই একদল অজানা কিন্তু অপরিহার্য উপাদান কাজ করছে। এরা হলো "বিরল পৃথিবী উপাদান" বা Rare Earth Elements (REEs)। এই ১৭টি ধাতব উপাদান, যেমন নিওডিমিয়াম, ইউরোপিয়াম, ডাইস্প্রোসিয়াম ইত্যাদি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর মূল চালিকাশক্তি।

May 11, 2025 - 14:20
প্রযুক্তির গোপন শক্তি: বিরল পৃথিবীর উপাদান ও প্রোমেথিয়াম রহস্য উদঘাটন
Image from: AI

REEs-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এদের চৌম্বকীয়, আলোক বিকিরণ এবং অনুঘটক গুণাবলী। এই উপাদানগুলো ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির অনেক কিছুই অচল। উদাহরণস্বরূপ, নিওডিমিয়াম ব্যবহৃত হয় শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে, যা হেডফোন, স্পিকার এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটরে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপিয়াম ব্যবহৃত হয় LED আলোতে উজ্জ্বল লাল রঙ প্রদানে।

তবে, এই উপাদানগুলো প্রকৃতিতে খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায় না, বরং এগুলোকে খনিজ থেকে আলাদা করা জটিল এবং ব্যয়বহুল। বর্তমানে, চীন বিশ্বের প্রায় ৯০% REEs প্রক্রিয়াকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা অন্যান্য দেশের জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

REEs-এর মধ্যে প্রোমেথিয়াম (Pm) একটি বিশেষ উপাদান। ১৯৪৫ সালে আবিষ্কৃত এই উপাদানটি পৃথিবীর ভূত্বকে প্রায় ৪৫৫ গ্রাম পরিমাণে বিদ্যমান, এবং এর কোনো স্থিতিশীল আইসোটোপ নেই। এর রেডিওঅ্যাকটিভ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি গবেষণার জন্য দীর্ঘদিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা প্রোমেথিয়ামের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি সফলভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা একটি বিশেষ অর্গানিক লিগ্যান্ড ব্যবহার করে প্রোমেথিয়ামকে পানিতে দ্রবীভূত করে, তারপর এক্স-রে বিকিরণ ব্যবহার করে এর পারমাণবিক বন্ধনের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। এই গবেষণার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা ল্যান্থানাইড সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাঁকা স্থান পূরণ করতে পেরেছেন।

প্রোমেথিয়াম-১৪৭ আইসোটোপের বিটা বিকিরণ বৈশিষ্ট্য এটিকে পারমাণবিক ব্যাটারি তৈরিতে উপযোগী করে তোলে। এই ধরনের ব্যাটারি আগে হার্ট পেসমেকারে ব্যবহৃত হতো এবং বর্তমানে মহাকাশযানে আলো সরবরাহে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, এর রেডিওঅ্যাকটিভ প্রকৃতির কারণে ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

REEs-এর প্রক্রিয়াকরণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এতে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার হয় এবং বর্জ্য উৎপন্ন হয়। তাই, বিজ্ঞানীরা এখন পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই প্রক্রিয়া উন্নয়নে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল ঘোষণা করেছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের পণ্যগুলিতে ১০০% পুনর্ব্যবহৃত REEs ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন একটি বড় সুযোগ হতে পারে। যদি আমরা REEs-এর পুনর্ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াকরণে দক্ষতা অর্জন করতে পারি, তবে আমরা বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ চেইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।

বিরল পৃথিবী উপাদানগুলো আমাদের আধুনিক জীবনের অদৃশ্য নায়ক। প্রোমেথিয়ামের মতো উপাদানের রহস্য উদ্ঘাটন আমাদের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে পারে। তবে, এই উপাদানগুলোর প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবহারে পরিবেশগত এবং কৌশলগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা আমাদের সচেতনভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

তথ্যসূত্র:

1. "Rare Earth Elements Tech: Expert Guide to 2025 Innovations" [ Discovery Alert ]

Source link: https://discoveryalert.com.au/news/rare-earth-elements-2025-technologys-hidden-powerhouse/

2. "Rare earth element that glows violet has scientists excited about the future" [ Earth.com ]

Source link: https://www.earth.com/news/promethium-rare-earth-element-elusive-properties-finally-decoded-after-80-year/