প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে আর কবে সচেতন হব আমরা!

আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে গ্রামীণ অঞ্চলে রাত হলেই ঝোপঝাড়ে, পুকুর পাড় এবং বাড়ি আশেপাশে হাজার হাজার জোনাকি পোকা দেখা যেত। সেগুলো টিপ টিপ করে জ্বলে এক অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করত। কিন্তু এখন কেন জানি আর জোনাকি পোকা দেখা যায় না। থাকলেও এখন কিন্তু সংখ্যায় খুবই কম দেখা যায়।

Nov 11, 2024 - 00:37
প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে আর কবে সচেতন হব আমরা!
প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে আর কবে সচেতন হব আমরা

আসলে বর্তমানে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ওপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ছে। আমরা মানুষেরা তাদের আশ্রয়স্থল নির্বিচারে ধ্বংস করে ফেলছি। জোনাকি পোকা সাধারণত জলাভূমি, গাছপালা কিংবা জঙ্গল ঘেরা এবং আর্দ্র জায়গাগুলোতে থাকতে পছন্দ করে। কীটনাশক এবং আলোক দূষণের পাশাপাশি কিন্তু বনায়ন ধ্বংস, কৃষিজমি ও নতু নতুন বসতি স্থাপনের জন্য জমি ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আবাসস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। 

এর ফলে জোনাকি পোকা তাদের নিরাপদ পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। শুধু জোনাকি পোকা কেন এখন গ্রামাঞ্চলে রঙিন প্রজাপতি ও ফড়িং এর বিচরণ এক রকম নেই বললেই চলে। শুধু মানুষের নির্বিচারে গাছাপালা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস, জমি কিংবা খোলস পরিবেশে কীটনাশক ব্যবহার এবং আলোক দূষণের কারণে অনেক প্রাণী, উদ্ভিদ এবং পোকামাকড় পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। 

আগে গ্রামে বিভিন্ন স্থানে গুইসাপের পাশাপাশি বিড়ালের মতো দেখতে (আকারে কিছুটা বড়) বন্য প্রাণী দেখা যেত। যাকে আমরা গ্রামের ভাষায় 'গাউরা' বলতাম। কিন্তু হতাশাজনক হলেও সত্য যে, এই প্রাণীগুলো এখন আর দেখতেই পাওয়া যান না। তাছাড়া অতীতে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংসের মতো ভয়ংকর কাজ করতেও কিন্তু আমরা দ্বিধাবোধ করিনি। 

তাছাড়া পরিবেশে চরম মাত্রায় খাদ্যসংকট, বনাঞ্চল ধ্বংস এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থলের অভাবে আজ পরিবেশ থেকে এক রকম নীরবেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল এবং ছোট্ট চঞ্চল পাখি টুনটুনি। বিশেষ করে আবাসস্থল ধ্বংস এবং খাদ্যাভাবের পাশাপাশি শিকারিদের শিকারের কারণে প্রকৃতির বন্ধু দোয়েল এবং টুনটুনি পাখিসহ শতাধিক প্রজাতির নিরীহ প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির মুখে চলে গেছে। 

অথচ এদের সুরক্ষায় আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বদাই যতটা সরব হই না কেন বাস্তবে কিন্তু তার ৫% লক্ষ্য করা যায় না। আমাদের চরম উদাসীনতা কিংবা হিংস্রতার মুখে আজ প্রকৃতির এসব প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দেশে অনেক আইন থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ ও ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না বললেই চলে। যার ফলে এখন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, তীব্র মাত্রায় বৃষ্টিপাত, বন্য এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

Sherazur Rahman

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.