বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে !

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সাম্প্রতিক সময়ে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, চলতি ২০২৪ সালের ২২শে জুলাই ছিল বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, গত ২০২৩ সালের জুলাইয়ে গড়া আগের দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে চলতি ২০২৪ সালের ২১, ২২ ও ২৩শে জুলাইয়ের তাপমাত্রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সাম্প্রতিক সময়ে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, চলতি ২০২৪ সালের ২২শে জুলাই ছিল বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, গত ২০২৩ সালের জুলাইয়ে গড়া আগের দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে চলতি ২০২৪ সালের ২১, ২২ ও ২৩শে জুলাইয়ের তাপমাত্রা।

Sep 23, 2024 - 23:42
Sep 23, 2024 - 23:42
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে  !

নাসার বিজ্ঞানীরা নিবিড়ভাবে গবেষণা করে দেখেছেন যে, মানুষের ত্রুটিপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা প্রধানত বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইড এর মতো ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস অতি মাত্রায় নির্গমনের কারণেই বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজ্ঞানীরা। নাসা মূলত দুই ডজনের বেশি ‘আর্থ-অবজার্ভিং’ স্যাটেলাইট ও ৬০ বছরের বেশি সময়ের সংগৃহীত বৈশ্বিক তাপমাত্রার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন আশঙ্কাজনক তথ্য প্রকাশ করে।

 

চলতি ২০২৪ সালের ৮ই মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন মনিটরিং সংস্থা ‘কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’ এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে, চলতি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস ছিল বিশ্বের তাপমাত্রা রেকর্ডের ইতিহাসে এক উষ্ণতম মাস। তাদের দেয়া তথ্যমতে, গত এপ্রিল মাসের বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের প্রাক শিল্প যুগ থেকে রেকর্ডকৃত গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১.৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। চলতি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

 

এদিকে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত দ্য স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে গত ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চল ছিল এশিয়া। গত ২০২৩ সালে এশিয়ার বাতাসে বার্ষিক গড় তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যা গত ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ০.৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে ১.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

বৈশ্বিক তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনে যাচ্ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর হিমবাহ গলে গিয়ে ১৯০০ সালের পর থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা যে হারে বেড়েছে, তা কিন্তু গত ৩ হাজার বছরেও দেখা যায়নি। আর এর বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি ফেলতে যাচ্ছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অত্যন্ত জনবহুল দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তীব্র তাপমাত্রার পাশাপাশি অতি বৃষ্টির প্রভাবে ইতোমধ্যেই জনজীবন বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে।

 

তাছাড়া বিগত কয়েক দশকে আমাদের চিরচেনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খুব দ্রুত গতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বরফ আচ্ছাদিত দক্ষিণ মেরুর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। মূলত গত ২০২০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি কমান্ডান্ট ফেরাজ অ্যান্টার্কটিক স্টেশনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাছাড়া জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০১৭ সালে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে অবস্থিত আর্জেন্টিনার একটি গবেষণা কেন্দ্রে দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।

গত ১৯৮০ সালের ২৮ ডিসেম্বর সাগর থেকে ৮,২০২ ফুট উঁচু অ্যান্টার্কটিক মালভূমিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মাইনাস -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই মধ্য অ্যান্টার্কটিকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস -৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের দেয়া তথ্যমতে, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে ইতোমধ্যেই রেকর্ড পরিমাণে প্রায় ১৯.১ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকার বরফ গলে গিয়ে সরাসরি মিশে গেছে সাগরের বুকে।

আর এভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শুধু সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি জনিত কারণেই অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর স্থলভাগের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকুলের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য আগামী ২১০০ সালের মধ্যে হয়ত পৃথিবীর নিম্ন অঞ্চলের একটি বড় অংশ চিরতরে সাগরের বুকে তলিয়ে যেতে পারে।

এদিকে স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবি ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের দীর্ঘ মেয়াদি তাপমাত্রা হ্রাসবৃদ্ধি জনিত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই নতুন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ৬টি সুবিশাল আকারের হিমবাহতে বর্তমানে যে হারে বরফ গলে যাচ্ছে, তা কিন্তু আপাতত আর বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাদের দেয়া প্রেডিকশন অনুযায়ী, এই ৬টি হিমবাহে থাকা সকল বরফ গলে গেলে সমুদ্রের সারফেসের উচ্চতা হয়ত আনুমানিক ১.২ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। যার আলামত কিনা এখনই প্রকাশ পেতে শুরু করে দিয়েছে।