ডিজিটাল মেমোরি প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে 'পোক্সিয়াও'!
পোক্সিয়াও: "চালের দানার আকারের ফ্ল্যাস মেমোরি ডিভাইস যা মানব মস্তিষ্কের গতির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছে।"

ফুদান ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সম্প্রতি গবেষণাগারে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির একটি ফ্ল্যাস মেমোরি ডিভাইসের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন, যার নাম দিয়েছেন "পোক্সিয়াও" (ভোরের আলো)। চালের দানার মতো ছোট এই মেমোরি ডিভাইসের ডেটা ট্রান্সফারের গতি অবিশ্বাস্যভাবে ৪০০ পিকোসেকেন্ড (এক সেকেন্ডের এক লাখ কোটি ভাগের এক ভাগ)।
বর্তমানে প্রচলিত মেমোরি কার্ড বা ফ্ল্যাশ মেমোরিতে (যেমন মোবাইল বা পেনড্রাইভে ব্যবহৃত) যেখানে ডেটা লিখতে বা মুছতে মিলিসেকেন্ড সময় লাগে, সেখানে পোক্সিয়াও ডিভাইস প্রায় ১ লাখ গুণ দ্রুত গতির হবে। গবেষকরা দাবি করেছেন, এর গতি মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের গতির অনেকটা কাছাকাছি হবে।
বর্তমান কম্পিউটার প্রযুক্তিতে মেমোরি (ডেটা সংরক্ষণের অংশ) ও প্রসেসর (গণনার অংশ) আলাদা থাকে। এর ফলে ডেটা আদান-প্রদানে কিছুটা হলেও সময় লাগে, যাকে "ভন নিউম্যান বটলনেক" বলা হয়। ফুদান ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, পোক্সিয়াও প্রযুক্তি সফল হলে এই সীমাবদ্ধতা অনেকটাই দূর করা সম্ভব হবে।
এই মেমোরি ডিভাইস একইসঙ্গে দ্রুত ডেটা সংরক্ষণ ও সরাসরি সেই ডেটা দিয়ে গণনা চালাতে পারবে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, হাসপাতালের রিয়েল-টাইম ডেটা বিশ্লেষণসহ নানা ক্ষেত্রে মুহূর্তেই বিশাল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে বলে গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন। তবে এ দাবি কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনেকটাই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পূর্বাভাস মাত্র।
গবেষকদের মতে, পোক্সিয়াও প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে ভবিষ্যতের কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইসের গতি অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে যাবে। এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে পারবে, এমনকি কম্পিউটার ব্রেইন ইন্টারফেস প্রযুক্তিতেও এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে পারে।
বর্তমানে এই প্রোটোটাইপ মাত্র কয়েক কিলোবাইট ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম। অথচ বাস্তব জীবনের ডিজিটাল ডিভাইসে টেরাবাইট পরিমাণের (হাজার গিগাবাইটের) ডেটা প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়। গবেষকরা স্বীকার করেছেন, বড় আকারে উৎপাদনযোগ্য করতে হলে ডিভাইসটির ডেটা ধারণক্ষমতা বাড়ানো এবং শক্তি সাশ্রয়ী করে তুলতে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
গবেষকরা নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও বাস্তবে এটি এখনো গবেষণাগারের প্রাথমিক ও উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে বাজারে আসতে এটি আরও হয়ত প্রায় এক দশক সময় নিতে পারে। সুতরাং, ল্যাব পর্যায়ে পরীক্ষামূলক সাফল্য পাওয়া গেলেও এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ কাজ হবে না। বরং এর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, টেক এক্সপ্লোর।
https://www.scmp.com/news/china/science/article/3306971/china-unveils-worlds-fastest-hard-drive-poxiao-dawn-new-flash-memory