এবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) টেকনোলজি!

একবিংশ শতাব্দীর এক নতুন চমক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পরিবর্তে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)   প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে ক্লাসে পাঠদান শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে ডেভিড গেম কলেজে। এটি এখনো পর্যন্ত একেবারেই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এর ব্যবহার আগামী এক দশকের মধ্যে হয়ত সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

Sep 3, 2024 - 18:08
Sep 5, 2024 - 12:08
এবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) টেকনোলজি!

মূলত যুক্তরাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক বা সম মানার গ্রেডের শ্রেণিকক্ষে প্রথম বারের মতো ২০ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি শিক্ষকের পরিবর্তে উচ্চ পর্যায়ের (এআই) প্রযুক্তির ডিভাইস দ্বারা পাঠদান করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এই পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা ঠিক কতটুকু সফল হবে তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। এক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য পেলে পর্যায়ক্রমে এর গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু আবশ্যিকভাবেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

এদিকে বিশ্বের প্রথম সারির বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে গবেষণারত থিংক ট্যাংকের দেয়া প্রেডিকশন মতে, আগামী ২০২৩ সালের পরবর্তী সময়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির প্রভাবে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ কর্মী কাজ হারাতে পারেন। যদিও এই প্রেডিকশন শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের শক্তিশালী এআই প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিভাইস ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছে। 

তবে যাই হোক না কেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর উচ্চ মাত্রায় দক্ষতা অর্জনকারী কর্মীদের জন্য কিন্তু নিশ্চিতভাবে এক নতুন দুয়ার খুলে যাবে। বিশেষ করে আগামী দশকে হয়ত এভিয়েশন, অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং হাব, চিকিৎসা, ব্যাংক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে নতুন রোবোটিক্স এন্ড আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির বৈপ্লবিক ব্যবহার। যার নিয়ন্ত্রণ করবে উচ্চ মাত্রায় প্রযুক্তিতে সুদক্ষ কর্মীরা। 

উদাহরণ হিসেবে এখানে উল্লেখযোগ্য যে, উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর ম্যাসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে চীন তার নিজস্ব রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এআই টেকনোলজি সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, চীনের হফেই প্রদেশে বিখ্যাত 'বিওয়াইডি' এর বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) কার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে প্রায় আট শতাধিক এই রোবটিক্স বাহু ইন্সটল  করেছে। সেখানে রোবটগুলো একটি গাড়ির চারটি দরজা লাগাতে সময় নেয় মাত্র ৯৮ সেকেন্ড। এই রোবটের কাজ এতই নিখুঁত যে তাদের ভুলের সীমা মাত্র ০.৫ মিলিমিটার। যা সাধারণ কর্মীর পক্ষে হয়ত কয়েক ঘণ্টায় কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তির রোবট এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এর কল্যাণে শিল্প খাতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে উৎপাদনশীলতা তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পেলেও আশঙ্কাজনক হারে কর্মী নিয়োগ হয়ত ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। আর এটাই হচ্ছে কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এক নতুন ধারণা। যার সাথে আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত সেভাবে সম্পৃক্ত হতে পারিনি। যা ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর বৈশ্বিক শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমাদের সাবলীল অংশগ্রহণ মারাত্বকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 


তাই এখন আমাদের অবশ্যই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পরিকল্পনা মাফিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রাথমিক স্তর থেকে একেবারেই উচ্চস্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত আমাদের স্নেহের শিক্ষার্থীরা যাতে বিজ্ঞান মনোস্কতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন এবং ব্যবহারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গড়ে উঠার বিষয়টি এখন সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। 

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.