বিজ্ঞানীদের তৈরি এক অতি বিরল এবং চরম মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় মৌল ফ্র্যান্সিয়াম!

বর্তমানে পৃথিবীতে কৃত্রিমভাবে তৈরি অন্যতম একটি বিরল মৌল বা ধাতু হচ্ছে ফ্র্যান্সিয়াম। এটি পর্যায় সারণির ৮৭তম মৌলিক পদার্থ এবং এর আণবিক সংকেত Fr। অত্যন্ত মূল্যবান ফ্র্যান্সিয়াম হল একটি ক্ষারীয় ধাতু। যা পর্যায় সারণিতে গ্রুপ 1 (IA) এর সদস্যভুক্ত অস্থায়ী কৃত্রিম মৌল। এর পারমাণবিক ভর ২২৩.০১৯৭।

Dec 23, 2024 - 17:17
বিজ্ঞানীদের তৈরি এক অতি বিরল এবং চরম মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় মৌল ফ্র্যান্সিয়াম!
বিজ্ঞানীদের তৈরি এক অতি বিরল এবং চরম মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় মৌল ফ্র্যান্সিয়াম!

চরম মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় এই ধাতু প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। তবে তা বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে তৈরি করেন। এটি একটি অস্থায়ী মৌল হলেও কিন্তু তা অন্য মৌলের সাথে বিক্রিয়া করতে সক্ষম। এটি গবেষণাগারে তৈরির মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যেই তার অর্ধেক জীবন শেষ করে ফেলে। কঠিন অবস্থায় ফ্র্যান্সিয়াম মৌল এর রং হচ্ছে কিছুটা রুপালি এবং ধূসর বর্ণের।

আসলে ১৯৩৯ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত কুরি ইনস্টিটিউটে মার্গুরাইট পেরেই (Marguerite Perey) এই অতি বিরল এই মৌলটি আবিষ্কার করেন। মার্গুরাইট পেরেই ছিলেন ফরাসি একাডেমি অফ সায়েন্সে নির্বাচিত প্রথম নারী। এমনকি নোবেল বিজয়ী মেরি কুরিও সেই সম্মান অর্জন করেননি। তবে মরণব্যাধী ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ ১৫ বছর যুদ্ধের পর তিনি ১৯৭৫ সালে মারা যান।

বিজ্ঞানীরা ল্যাবে খুবই স্বল্প পরিমাণে চরম মাত্রায় তেজস্ক্রিয় ফ্র্যান্সিয়াম মৌল তৈরি করতে সক্ষম হলেও কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে, পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে মাত্র ১৫ গ্রামের কিছু বেশি (এক আউন্সের কম) এই মৌল পাওয়া সম্ভব নয়। ফ্র্যান্সিয়াম মৌলের নামটি ইউরোপের দেশ ফ্রান্সের নামে রাখা হলেও বাস্তবে বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর নাম রাখেন "ক্যাটিয়াম"। যা পরবর্তীতে 'ক্যাটিয়াম' নাম পরিবর্তন করে এই দুর্লভ মৌলের নাম রাখা হয় ফ্র্যান্সিয়াম।

অস্থায়ী মৌল হিসেবে এই ধাতুর ৩৩টি আইসোটোপ চরম মাত্রায় তেজস্ক্রিয় হয়ে থাকে। এটির সবচেয়ে স্থিতিশীল আইসোটোপ, ফ্রান্সিয়াম-২২৩ ( প্রাকৃতিক ক্ষয় শৃঙ্খলের পরে এটিকে অ্যাক্টিনিয়াম-কে বলা হয় ) এর অর্ধ-জীবন মাত্র ২২ মিনিট। এর গলনাঙ্ক ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্ফুটনাঙ্ক ৬৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। তাছাড়া সাধারণ তাপ ও চাপে এর ঘনত্ব ১.৮৭ ঘন গ্রাম/সেন্টিমিটার।

গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি এই তেজস্ক্রিয় মৌলকে পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গবেষণাগারে প্রোটন দিয়ে থোরিয়াম মৌলকে আঘাত করে কিংবা নিউট্রন দিয়ে রেডিয়াম মৌলকে আঘাত করে ফ্র্যান্সিয়াম তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। এটি একটি অস্থায়ী মৌল হওয়ায় অন্যান্য মৌলে দ্রুত ভেঙ্গে যায়।

এর কোন বাণিজ্যিক ব্যবহার না থাকলেও উচ্চস্তরের নিউক্লিয়ার টেকনোলজি রিসার্চ এবং রেডিও আইসোটপ নির্ভর মেডিক্যাল সায়েন্স বিশেষ করে ক্যান্সার ডাইগোনেস্টিক গবেষণায় সীমিত পরিসরে বিজ্ঞানীরা ফ্র্যান্সিয়াম মৌল সতর্কতার সাথে ব্যবহার করেন।

তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া, উইকি বুকস, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ (ইউএস)।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.