কার্ল সাগানের মহাজাগতিক পথচলা শুরু হয়েছিল সেদিন
কার্ল সাগান—বিখ্যাত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং বিজ্ঞান লেখক। তিনি মহাকাশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিজ্ঞানের প্রচারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য তিনি আজও তিনি জনপ্রিয়।
কার্ল সাগান ১৯৩৪ সালের আজকের দিন অর্থাৎ ৯ নভেম্বর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার বিজ্ঞান ও মহাকাশের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। বাবা-মাও তাঁকে বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করতেন। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং সেখানেই পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।
কার্ল সাগান নাসার জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করেন।
তিনি ভয়েজার মিশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কাজ করেছিলেন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রহের গঠন, তাদের বাতাস, জলবায়ু, এবং জীবন ধারণের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়। বিশেষ করে, মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে তার আগ্রহ ছিল অত্যন্ত প্রবল।
কার্ল সাগান সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার লেখা ‘কসমস: এ পারসোনাল ভয়েজ’ বইটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই বইয়ে তিনি মহাবিশ্বের গঠন, এর বিশালতা ও সৌন্দর্য এবং এর রহস্য নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করেছেন। তার লেখা অন্য আরেকটি বই ‘দ্য ডেমন-হন্টেড ওয়ার্ল্ড’ বিজ্ঞানপ্রেমীদের কাছে বিশেষভাবে প্রিয়।
১৯৮০ সালে কার্ল সাগান ‘কসমস’ নামে একটি টিভি সিরিজ শুরু করেন।
এটি ছিল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিজ্ঞান ডকুমেন্টারি, যা পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে প্রচারিত হয়েছিল। এই সিরিজে তিনি মহাবিশ্বের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং মানুষকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন। এই সিরিজটি তাকে সাধারণ বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল।
কার্ল সাগান বিশ্বাস করতেন, মহাবিশ্বে আমরা একা নই। তিনি একদিকে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর অন্যদিকে মানবজাতির প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করতেন। তিনি সবসময় মানুষকে নতুন জ্ঞান অর্জনে এবং অজানার সন্ধানে বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তাঁর মতে, বিজ্ঞান শুধু তথ্য জানার মাধ্যম নয় বরং মানবজীবনের উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।
কার্ল সাগানের অবদান শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানে নয় বরং পুরো বিজ্ঞানচর্চার ওপর তার প্রভাব ছিল অসাধারণ। তাঁর জীবন ও কাজ মানুষকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করেছে এবং মহাবিশ্বের গভীরে উঁকি দেওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে। তাঁর বই, গবেষণা এবং ‘কসমস’ টিভি সিরিজ এখনো মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
কার্ল সাগান আমাদের দেখিয়েছেন, বিজ্ঞানের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে জানার চেষ্টা মানেই মানবতার প্রতি এক মহতী দায়িত্ব পালন করা। ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি প্রয়াত হন।
জন্মদিনে এই বিজ্ঞানীর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধ।
সূত্র: ব্রিটানিকা