হ্যালুসিনেশন আসলে কী? মানুষ কেন হ্যালুসিনেট করে?

ধরুন, আপনি ইজি চেয়ারে বেস আছেন, হঠাৎ দেখলেন বারান্দার কোণে একটা সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি ভয় পেয়ে চিৎকার দিলেন ‘সাপ! সাপ!’ বলে। অন্যরা ছুটে এলো আপনার চিৎকার শুনে। কিন্তু তারা এসে কিছুই দেখতে পেল না। তখন আপনিও আগের জায়গাটা লক্ষ্য করে দেখলেন, আসলে সেখানে কিছুই নেই। আপনার মনে হলো, সাপটা ওখানে ঠিকই ছিল, এখন পালিয়ে গিয়েছে। বাড়ির লোকেদের ওপর আপনার রাগ হলো, কারণ তারা আপনার কথা বিশ্বাস করছে না। ধরুন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

Dec 10, 2024 - 12:20
হ্যালুসিনেশন আসলে কী? মানুষ কেন হ্যালুসিনেট করে?
হ্যালুসিনেশন আসলে কী? মানুষ কেন হ্যালুসিনেট করে?

কোনোদিন হয়তো আপনার আশপাশে কিছু মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করছেন, যাদের আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই। আবার হয়তো এমন কাউকে দেখছেন, যিনি অনেক আগেই মারা গিয়েছেন।

এমনটা কেন হচ্ছে বলুন তো?

আসলে আপনার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। হ্যালুসিনেশন একটি মানসিক সমস্যা।

এই সমস্যায় পড়লে মানুষ অদ্ভুত কিছু অনুভব করেন যা বাস্তবে ঘটে না। এটি কেবল দেখার ব্যাপার নয়, বরং আপনি অনেক ভুলভাল কিছু শুনতে পারেন, যে শব্দ হয়তো কেউ করেইনি। হতে পারে সেটা অন্য কারও কথা শোনা। এমনকী অন্যের স্পর্শের অনুভূতিও পেতে পারেন। আবার হয়তো এমন কিছুর গন্ধ পাচ্ছেন, যার উৎস আশপাশে নেই।

এগুলোই আসেল হ্যালুসিনেশন।

হ্যালুসিনেশন আসলে মস্তিষ্কের একটি ভুল প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়া আপনাকে এমন কিছু দেখাতে, শোনাতে, বা অনুভব করাতে পারে যা আসলে নেই। এটি সাধারণত পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের যেকোনো একটির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। দেখা, শোনা, ঘ্রাণ ও স্পর্শের কথা তো বললামই, এমনকী স্বাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। আপনি হয়তো একটা তাজা সেদ্ধ ডিম খাচ্ছেন, কিন্তু আপনি পচা ডিমের স্বাদ পাচ্ছেন—হ্যালুসিনেশনের ক্ষেত্রে এমনটাও হতে পারে।

হ্যালুসিনেশন কেন হয়?

হ্যালুসিনেশনের বেশ কিছু কারণ আছে। কারণগুলো শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরনেরই হতে পারে।

সিজোফ্রোনিয়া নামে একটা মানসিক রোগ আছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অন্যের কণ্ঠস্বর শুনতে পান। এমনকী একাধিক কল্পিত ব্যক্তির উপস্থিতি অনুভব করেন চারপাশে। এবং তাদের সঙ্গে কথাও বলেন।

ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তীব্র মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তিও হ্যালুসিনেশনের শিকার হতে পারেন।

নিউরোলজিকাল নানা সমস্যার কারণেও মানুষ হ্যালিসিনেশনে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন মৃগি রোগিরা প্রায়ই হ্যালুসিনেশনের শিকার হন। তাঁদের মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তাঁরা অদ্ভুত দৃশ্য বা শব্দ শুনতে পান।

পারকিনসন’স রেোগে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন অনুভব করেন। ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, এজন্য তাঁদেরও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। গভীর মানসিক আঘাত বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপও হ্যালুসিনেশনের অন্যতম।

হ্যালুসিনেশনের আরেকটা কারণ ড্রাগসের প্রভাব। সেটা যেমন মাদকদ্রব্য হতে পারে, তেমনি চিকিৎসায় ব্যবহৃত কড়া ওষুধের প্রভাবে হ্যালুসিনেশন ঘটতে পারে।

হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ যেমন এলএসডি বা ম্যাজিক মাশরুমে আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক ইমেজ তৈরি হতে পারে। ফলে তারা হ্যালুসিনেট করতে পারেন।

অ্যান্টিসাইকোটিক বা সেডেটিভ জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।

এছাড়া শারিরিক কিছু কারণেও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। যেমন, দীর্ঘ সময় না ঘুমালে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হতে পারে, ফলে হ্যালুসিনেট করা অস্বাভিক কিছু নয়। উচ্চ মাত্রার জ্বরের প্রভাবে শিশুদের মস্তিষ্কে বিভ্রম সৃষ্টি হয়, তারা হ্যালুসিনেট করে।

শরীরে পানি বা পুষ্টির অভাব হলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তাই ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর ব্যক্তিরাও হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হতে পারে।

হ্যালুসিনেশন শুধু ব্যক্তি নয়, তার আশেপাশের মানুষ এবং দৈনন্দিন জীবনের ওপরও বড় প্রভাব ফেলে। এটি কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ব্যক্তি হ্যালুসিনেশনকে বাস্তব মনে করেন এবং সেটা বিশ্বাস করেন।

ধরা যাক, কেউ মনে করছেন, কেউ একজন তাঁকে সবসময় ফলো করছে এবং সুযোগ পেলেই তাকে হত্যা করতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। আতঙ্কের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে তাঁর ভেতর।

হ্যালুসিনেশন পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবু এর কারণ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা সম্ভব। হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত একজন সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা কিংবা সাইকোথেরাপি দেওয়া উচিত।

সূত্র: স্মিথসনিয়ান ম্যাগাজিন