উচ্চ প্রযুক্তির ৩,২০০ মেগাপিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরায় মহাবিশ্বের নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে!

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী ডিজিটাল ক্যামেরা মহাকাশ বিজ্ঞানে এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। চিলির Vera C. Rubin Observatory-তে স্থাপিত অত্যন্ত হাই রেজুল্যুশন সক্ষমতার এই ৩,২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাটি মহাবিশ্বের অজানা, রহস্যময় অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।

May 10, 2025 - 18:16
উচ্চ প্রযুক্তির ৩,২০০ মেগাপিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরায় মহাবিশ্বের নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে!

ভেরা সি. রুবিন মানমন্দিরটি অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকার চিলির উত্তরাঞ্চলের সেরো পাচোন পর্বতশৃঙ্গে। এখানে ২০২৩-২৪ সালের শেষদিকে বসানো হয় এই গিগাপিক্সেল ক্যামেরা, যার কার্যক্রম ২০২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা। এই ক্যামেরাটি যুক্তরাষ্ট্রের SLAC National Accelerator Laboratory (স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অংশ) কর্তৃক নির্মিত এবং এটি নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল LSST (Legacy Survey of Space and Time) প্রকল্পের জন্য।

LSST প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সাল থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রতিরাতে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশ স্ক্যান করে ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি এবং গ্যালাক্সি গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহ করা। তাছাড়া এটি প্রতি ১৫ সেকেন্ডে এটি আকাশের এমন একটি অংশের ছবি তুলবে, যা চাঁদের চেয়েও কমপক্ষে সাত গুণ বড় হবে।

এই ক্যামেরা প্রতি রাতেই স্ক্যানিং করে প্রায় ২০ টেরাবাইট তথ্য সংগ্রহ করবে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করবেন গবেষকেরা। এটি ভবিষ্যতে ১৭ বিলিয়ন নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি নিয়ে বিশাল এক ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করবে। এর ফলে মহাবিশ্বের অজানা রহস্য এবং সম্ভাব্য এলিয়েন জীবনের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।

LSST প্রকল্পের মোট ব্যয় হয় প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে। এই উচ্চ প্রযুক্তির ৩,২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটি সংরক্ষণ করা হয়েছে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত -১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার কক্ষে, যাতে একেবারে ধুলামুক্ত পরিবেশে এর কার্যক্ষমতা ও স্থায়িত্ব কার্যকরভাবে বজায় থাকে। 

এটি শুধু আকারেই নয়, বরং ক্যামেরাটির প্রযুক্তিও হচ্ছে অভাবনীয় এবং উচ্চ মানের। এতে রয়েছে ২০১টি কাস্টম-ডিজাইন করা CCD সেন্সর যা মিলে গঠিত হয়েছে একটি অতিসূক্ষ্ম ফোকাল প্লেন। এই সেন্সরগুলো মাত্র ৫ মাইক্রন পর্যন্ত সমতল, যা একটি মানুষের চুলের প্রস্থের দশমাংশেরও কম। তুলনায়, একটি কাগজের পুরুত্ব প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রন।

এই ক্যামেরা শুধু সুদূর গ্যালাক্সি নয়, বরং নিকটবর্তী গ্রহাণু, সুপারনোভা, এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন মহাজাগতিক বস্তু শনাক্তেও ব্যবহৃত হবে, যা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই সুবিশাল মহাবিশ্বের বিস্তৃতি হতে পারে প্রায় ৯৩ বিলিয়ন লাইট ইয়ার বা তারও বেশি, যারাবার প্রায় ৯৫% গঠিত রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি দিয়ে—যেগুলোর প্রকৃতি এখনও অজানা। এই অজানাকে জানার পথে LSST ক্যামেরার তোলা ছবি ও তথ্য হতে পারে যুগান্তকারী।

এই ডিজিটাল ক্যামেরাটি কেবল একটি আধুনিক যন্ত্র নয়, বরং এটি এক বিশাল মহাজাগতিক গল্প বলার জানালা। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা মহাবিশ্বের অজানা রহস্যগুলো আরও গভীরভাবে জানতে ও বুঝতে পারব। যার মাধ্যমে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের অজানা রহস্যগুলো আরো গভীরভাবে স্টাডি করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র: NASA, Physics.org, Wikipedia, Rubin Observatory, Space.com

লেখার লিংক:-

https://rubinobservatory.org/explore/how-rubin-works/technology/camera 

https://phys.org/news/2024-04-slac-largest-digital-camera-built.html

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।