কমব্যাট এয়ারক্রাফটের সুরক্ষায় মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) টেকনোলজি!

বর্তমানে কমব্যাট এয়ারক্রাফট টেকনোলজিতে এক অতি উচ্চ প্রযুক্তির এভিয়নিক্স সিস্টেম হচ্ছে মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস)। এটি অনেকটা নতুন প্রযুক্তি হলেও এর ব্যবহার কিন্তু গত ২০১০ সাল বা তার আগে থেকে শুরু হয়ে যায়। এই সেন্সরের মূল কাজ হলো হেলিকপ্টার কিংবা বিমানের দিকে আগত মিসাইলকে শনাক্ত করে তা সাথে সাথে এয়ারক্রাফটের পাইলটকে শত্রু পক্ষের আগত মিসাইলের অবস্থান শনাক্তসহ যাবতীয় তথ্য প্রদান করা। যার আলোকে পাইলট পালটা এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ার করে, গতিপথ পরিবর্তন কিংবা ফ্লেয়ার বা চ্যাফের সাহায্যে আগত মিসাইলকে ইন্টারসেপ্ট বা বিভ্রান্ত করতে পারেন।

Oct 31, 2024 - 21:27
কমব্যাট এয়ারক্রাফটের সুরক্ষায় মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) টেকনোলজি!

বর্তমানে ফাইটার জেটের এভিয়নিক্স সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) সেন্সর টেকনোলজি। তবে আমেরিকার তৈরি এফ-১৬, এফ-১৫ কিংবা রাশিয়ার তৈরি এসইউ-২৭/৩০ যুদ্ধবিমানকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বাস্তবে এগুলোতে কিন্তু এই সেন্সর আগে থেকে ইনস্টল করা ছিল না। এতে করে পুরোনো ফাইটার জেটের পক্ষে শত্রু পক্ষের আগত সুপারসনিক কিংবা হাইপারসনিক গতির সারফেস টু এয়ার মিসাইল এবং এয়ার টু এয়ার মিসাইল ইন্টারসেপ্ট করাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে যেত। 

আর এই জটিল সমস্যা সমাধানে গত ২০১০ সালের আগে থেকে প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলো তাদের মূল্যবান যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের সুরক্ষা দিতে এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু করে। বিশেষ করে বর্তমানে উচ্চ প্রযুক্তির (এআই) যুগে শত্রুপক্ষের আকাশে টিকে থাকতে হলে এই সেন্সর সংযুক্ত করার আর বিকল্প কিছুই নেই। প্রথম দিকে যুদ্ধবিমানে এই জাতীয় ২টি সেন্সর ইন্সটল করা হলেও বর্তমানে অধিকাংশ চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের এয়ারফ্রেম এর মোট ৪টি এই সিস্টেম ইনস্টল করে এয়ারক্রাফটের ৩৬০ ডিগ্রি সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। 

আসলে এই সেন্সরগুলো কিন্তু অনেকটা (আরএসটি) সেন্সরের মতো কাজ করে। যা শত্রু পক্ষের দিক থেকে আগত সারফেস টু এয়ার মিসাইল কিংবা এয়ার টু এয়ার মিসাইলের বুস্টার ইঞ্জিন থেকে উৎপন্ন হিট সিগনেচার শনাক্ত করে মিসাইলের উপস্থিতি বুঝতে পারে। তার পাশাপাশি মিসাইলের গতি এবং বিমানের গতির সাথে মধ্যকার দূরত্ব নিখুঁতভাবে ক্যালকুলেশন করে মিসাইল হিট বা ইমপ্যাক্ট করার একেবারে সঠিক সময় পাইলটকে অবহিত করে। যা থেকে যুদ্ধবিমানের পাইলট খুবই দ্রুত পালটা ব্যবস্থা নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

প্রথমদিকে যুদ্ধবিমানের এয়ারফ্রেম এর পিছনদিকে ২টি মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) সেন্সর ইনস্টল করা হতো। তার মূল কারণ ছিল এক দশক আগের তৈরি সারফেস টু এয়ার এবং এয়ার টু এয়ার মিসাইল মিসাইলগুলো ছিল (আইআর) গাইডেড মিসাইল সিস্টেম নির্ভর। যা আসলে যুদ্ধবিমানের পেছনে থাকা ইঞ্জিনের উৎপন্ন তাপকে অনুসরণ (হিট সিগনেচার) করে হিট করত। তবে উচ্চ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এয়ার টু এয়ার মিসাইলের প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর তৈরি এয়ার টু এয়ার মিসাইলে (আইআর) গাইডেড টেকনোলজির পরিবর্তে আরো উচ্চ প্রযুক্তির রাডার গাইডেড সেন্সর ইনস্টল করা হয়। 

এতে করে রাডার গাইডেড সেন্সর সজ্জিত মিসাইল এখন আর শুধু হিট সিগনেচার না খুঁজে তার নিজস্ব রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে সামনে বা পেছনে যে কোন দিক থেকেই শত্রু পক্ষের এয়ারক্রাফট চিহ্নিত করে মিসাইল হিট করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আর এই জটিল সমস্যা সমাধানে এবং এয়ার কমব্যাট মিশনে যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করতেই ফাইটার জেট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো বর্তমানে যুদ্ধবিমানের এয়ারফ্রেমের সামনে ২টি ও পেছনে ২টি করে মিসাইল এপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) সেন্সর ইনস্টল করে ৩৬০ ডিগ্রি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। 

তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই প্রযুক্তিকে ছাপিয়ে এয়ারক্রাফটে আরো অত্যাধুনিক হাইটেক টেকনোলজির ডিস্ট্রিবিউট এ্যাপরেচার সিস্টেম (ডিএএস) সেন্সর সিস্টেমের ব্যবহার শুরু করেছে আমেরিকা এবং রেড জায়ান্ট চীন। বিশেষ করে আমেরিকার তৈরি এফ-৩৫ এবং চীনের তৈরি জে-২০ নতুন প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমানে এই অভিনব প্রযুক্তি ইনস্টল করা শুরু হয়ে গেছে। যা হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আকাশে এয়ার টু এয়ার কিংবা সারফেস টু এয়ার মিসাইলের বিরুদ্ধে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করবে বলে মনে করা হয়।

তথ্যসূত্র: এমসোপিডিয়া, ইউকিপিডিয়া। 

Sherazur Rahman

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.