আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে ফ্রান্সের অ্যাডভান্স ‘রাফাল’ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান!
বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ইউরোপের দেশ সার্বিয়া গত ২৮শে আগস্ট নতুন এফ-৪ সিরিজের মোট ১২টি ফ্রান্সের তৈরি হাইলি অ্যাডভান্স দ্যাসাল্ট রাফাল মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করে। এই ১২টি ৪++ প্রজন্মের রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে প্রতিটি টুইন ইঞ্জিনের রাফাল যুদ্ধবিমানের পার ইউনিট কষ্ট হয় ২৫০ মিলিয়ন ডলার। সার্বিয়া ইতোমধ্যেই ফ্রান্সের দ্যাসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশনের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
এদিকে গত ২৪শে আগস্টে জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া ‘টেলিগ্রাম’ প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দুরভকে ফ্রান্সে আটক করার কারণে ফ্রান্সের সাথে ৮০টি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। সংযুক্ত আরব আমিরাত গত ২০২১ সালে ফ্রান্সের সাথে ১৬ বিলিয়ন ইউরো বা ১৭.৩২ বিলিয়ন ডলার ডলার চুক্তি মূল্যে মোট ৮০টি অ্যাডভান্স রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছিল। যা খুব সম্ভবত আগামী ২০২৭ সাল থেকে সরবরাহ শুরু করার কথা ছিল। তবে এই চুক্তি থেকে সরে আসার পেছনে হয়ত আবার আমেরিকার গোপন হাত থাকতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের সেরা শক্তিশালী এবং মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ফ্রান্সের তৈরি ৪++ প্রজন্মের রাফাল টুইন ইঞ্জিন যুদ্ধবিমান। এটি প্রথম ফ্রান্সের বিমান বাহিনীতে সার্ভিসে আসে গত ২০০৬ সালে বর্তমানে ফ্রান্সের এয়ার এন্ড স্পেস ফোর্সে মোট ১০২টি এবং নেভাল ফোর্সে ৪১ রাফাল-এম সিরিজের যুদ্ধবিমান অ্যাক্টিভ রয়েছে। আবার ফ্রান্সের পাশাপাশি মিশর ২৪টি (আরো ৩১টি নতুন অর্ডার করা হয়েছে), ক্রোশিয়া ১২টি (আরো ৬টি অর্ডার করা আছে), গ্রিস ১৮টি, ভারত ৩৬টি এবং কাতার ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান অপারেট করছে।
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে ক্রয়ের তালিকায় ভারত ২৬টি রাফাল-এম সিরিজের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছে। তার পাশাপাশি সার্বিয়া ১২টি, ইন্দোনেশিয়া ৪২টি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত মোট ৮০টি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করে। তাছাড়া গত ২০০৭ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সালের ১৪শে আগস্ট পর্যন্ত মোট প্রায় ৭টি থেকে ৮টি বিভিন্ন সিরিজের মাল্টিরোল রাফাল যুদ্ধবিমান আকাশেই ধ্বংস কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একজন পাইলট দ্বারা চালিত টুইন ইঞ্জিনের রাফাল যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম গতি প্রতি ঘণ্টায় ১,৯১২ কিলোমিটার বা ম্যাক ১.৮। এর ম্যাক্সিমাম টেক অফ ওয়েট ২৪,৫০০ কেজি এবং সর্বোচ্চ অস্ত্র বহন ক্ষমতা ৯.৫টন। এর কমব্যাট রেঞ্জ ১,৮৫০ কিলোমিটার হলেও এর ফেরি রেঞ্জ ৩,৭০০ কিলোমিটার (তিনটি ড্রপ ট্যাংকসহ)। এর সার্ভিস সিলিং ৫১,৯৫২ ফিট এবং রেট অফ ক্লাইম্ব প্রতি সেকেন্ডে ৩০৪.৮ মিটার। শক্তি উৎপাদনের জন্যে শক্তিশালী ২টি (Snecma M88-4e) আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
রাফাল মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯.৫ টন। তাছাড়া বর্ধিত রেঞ্জের এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার জন্য এই সিরিজের যুদ্ধবিমানে অতিরিক্ত ৬.৭ টন ওজনের তিনটি ৫২৪ গ্যালন (২ হাজার লিটার) জ্বালানি ট্যাংকও বহন করে। এই জ্বালানি ট্যাংক আবার অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেমে রিফুয়েলিং এ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কিন্তু নেভাল স্ট্রাইক মিশনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এই যুদ্ধবিমানের ফিক্সড ওয়েপন্স ডিফেন্স সিস্টেম হিসেবে একটি ৩০ এমএম (১.২ ইঞ্চি) জিআইএটি-৩০/এম৭৯১ (১২৫ রাউন্ড) অটোক্যানন সংযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া আরো ১৩টি হার্ডপয়েন্টে মিকা ও স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি মেটওর এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল এবং গ্রাউন্ড অ্যাটাক হ্যাম্মার এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল বহন করে। তাছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে জিইউবি-১২/২৪ লেজার-গাইডেড বোম্বস, এএস-৩০এল, মার্ক-৮২ জিইউবি-৪৯ জিপিএস গাইডেড বোম্বস ব্যবহার করে। তাছাড়া মেরিটাইম স্ট্রাইক মিশনের জন্য রাফালে-এম যুদ্ধবিমান এয়ার লঞ্চড বেসড এক্সোসেট এএম-৩৯ ব্লক-২ অ্যান্টি-শিপ মিসাইল বহন করতে পারে।
এদিকে রাডার ক্রস সেশন (আরসিএস) সক্ষমতার বিবেচনায়, আমেরিকার চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ সিরিজের যুদ্ধবিমানের আরসিএস ৩ থেকে ৫ স্কোয়ার মিটার। যেখানে ইউরোফাইটার টাইফুনের আরসিএস ০.৫ স্কোয়ার মিটার এবং রাফাল যুদ্ধবিমানের আরসিএস ০.১ থেকে ১.০ স্কোয়ার মিটার হতে পারে। আবার মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশনের ৪.৫ জেনারেশনের এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমানের আরসিএস হতে পারে ১ স্কোয়ার মিটার।
সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman)