প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে চীন!

চীনের সরকার একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বিষয়বস্তু পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ৭ই মার্চ শুক্রবার বেইজিং পৌর শিক্ষা কমিশন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য (এআই) সাধারণ শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করতে তিন বছরের এক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

Mar 10, 2025 - 17:17
May 10, 2025 - 17:17
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে চীন!
Image from: CGTN

এই মহা কর্মপরিকল্পনার আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এআই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা তৈরি ও দক্ষ গড়ে তোলা হবে। যা ভবিষ্যতে চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এআই শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক নীতিগুলো শিখবে এবং এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এই উদ্যোগ চীনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলবে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করবে। 

এআই শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে চীনের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উৎসাহিত করা হবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আসন্ন শরৎকালীন সেমিস্টার থেকে কার্যকর হওয়ার পর, এই পরিকল্পনায় স্কুলগুলোকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে কমপক্ষে আটটি ক্লাস ঘণ্টার মধ্যে সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোর্স নির্ধারণ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা, শেখা, শিক্ষিত করা, মূল্যায়ন এবং গবেষণা পদ্ধতিতে সহায়তা করার প্রক্রিয়ায় এআই প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

চীনের বেইজিং পৌর শিক্ষা কমিশনের নতুন শিক্ষা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য (এআই) কোর্সগুলোতে মৌলিক (এআই) ধারণা এবং চিন্তাভাবনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া উচিত। তাছাড়া এই পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে যে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এআইয়ের জ্ঞানচর্চার উপর জোর দেওয়া উচিত। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে যে এআই কীভাবে তাদের পড়াশোনা এবং দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করতে পারে।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটি এআই শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০০ জন পেশাদার শিক্ষক এবং ১ হাজার জন নিয়মিত শিক্ষক তৈরি করার পরিকল্পনা করছে বেইজিং পৌর শিক্ষা কমিশন। এই শিক্ষকরা এআই-এর মৌলিক ও উন্নত ধারণাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ ও কার্যকরভাবে পৌঁছে দেবার কাজ করবেন। এই প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে চীনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এআই-এর প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্পর্কে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলা হবে। 

এআই শিক্ষা প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি, এর ব্যবহার এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারবে এবং এর ইতিবাচক প্রয়োগ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করবে। এছাড়াও, এই উদ্যোগ চীনের শিক্ষকদের আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলবে, যা দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। আর বর্তমানে নতুন এই পরিকল্পনাকে চীনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

 আসলে গত ২০১৭ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে একটি মহা পরিকল্পনা তৈরি করে চীন। যার আলোকে গত ২০১৮ সালের দিকে সারা দেশের প্রায় ৫০০ বা এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এআই নিয়ে স্নাতক প্রোগ্রাম চালু করা হয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার আমেরিকার সাথে চলমান উদ্ভাবনী এবং প্রযুক্তি যুদ্ধ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি চ্যাটজিপিটির মতো অতি উন্নত এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর সাথে পাল্লা দিতে চীন চলতি ২০২৫ সালে তার নিজস্ব প্রযুক্তির এক অভাবনীয় ডিপশীক (Deepseek) এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বিশ্বের সামনে উন্মোচন করে নতুন চমক সৃষ্টি করেছে।

তথ্যসূত্র: সিএমজি, গ্লোবাল টাইমস, সিএনবিসি১৮।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।