নিজস্ব উদ্ভাবনী সক্ষমতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের!

ইন্টারন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) অলিম্পিয়াড (আইএইও) ২০২৪-এ দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। মূলত চলতি ২০২৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক (এআই) প্রতিযোগিতায় এবার সেন্ট যোসেফ কলেজের আরেফিন আনোয়ার ও নটর ডেম কলেজের মিসবাহ উদ্দীন ইনান রৌপ্যপদক পেয়েছেন।

Sep 15, 2024 - 20:21
নিজস্ব উদ্ভাবনী সক্ষমতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের!

তাছাড়া এই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন নটর ডেম কলেজের আবরার শহিদ ও একাডেমিয়ার রাফিদ আহমেদ। রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই আই অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় এবার বিশ্বের মোট ২৫টি দেশের ৯০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কনটেস্টের মূল লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে (এআই) প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার ও গবেষণায় আগ্রহী করে গড়ে তোলা।

আসলে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা যেমন গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, রোবটিক্স অলিম্পিয়াড কিংবা এআই অলিম্পিয়াডের মতো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে খুবই ভালো ফলাফল ও সুনাম অর্জন করছে। যা নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের সুনাম ও গৌরব সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ছে। আর এ ধরনের অর্জন আমাদের দেশে অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে হতাশাজনক হলেও সত্য যে, একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাস্তবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার মতো কোন কার্যকর নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে বর্তমানে যেভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সনদ, পদক ও সুনাম অর্জন হচ্ছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে সেভাবে কিন্তু আমাদের দেশ কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে না। 

আমাদের দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে নটরডেম কলেজ এবং সেন্ট জোসেফ কলেজসহ উচ্চস্তরের কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় আন্তরিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বাস্তবে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক অতি মলিন ও হতাশার চিত্র ফুটে উঠে। 

এখানে বাস্তবতা হচ্ছে যে, প্রযুক্তির জন্য আমরা আজও চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশের উপর শতভাগ নির্ভর হয়ে পরে রয়েছি। এমনকি চীনের তৈরি অতি সাধারণ মানের ২০০ টাকা দামের ক্যালকুলেটর নিজস্ব ডিজাইন ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করার মতো কোন সক্ষমতা আজও আমরা অর্জন করতে পারিনি। যা আমাদের দেশে দ্রুত ও কার্যকর শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি বাধা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে থেকে গেছে।

আসলে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যেতে না পারলে আমরা কিন্তু বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল কখনোই আদায় করে নিতে পারব না। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের তৈরি করা কোন ইনোভেটিভ আইডিয়া কিংবা নতুন কোন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য না হলে উদ্ভাবিত সেই প্রযুক্তি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলবে কিংবা সারা বিশ্বে সুনাম কুড়াবে। তবে বাস্তবে দেশের জন্য কিন্তু কিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে না। 

এজন্য মাঝে মধ্যে আমাদের দেশের অদম্য তরুণদের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের খবর নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গেলেও বাস্তবে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার ও মূল্যায়নের অভাবে কিছুদিন পর তার আর কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা আসলে কখনোই সেভাবে আমাদের দেশের যোগ্য, মেধাবী ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী তরুণ ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চেষ্টাই করিনি। যা হোক এ ধরনের হতাশাজনক পরিস্থিতি ও মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে দেশের যোগ্য ও মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের পিছনে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের।

তাই এখন সময় হয়েছে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে এবং বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য আধুনিক, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা খুব দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের। আর আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্জিত নতুন ইনোভেশন, আইডিয়া এন্ড টেকনোলজি যাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে কলাব্রেটিং করে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে তৈরি করার বিষয়টিও কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। এখন যার কোন বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।

লেখক:-  সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.