জেএফ-১৭ থান্ডার (ব্লক-৩) লাইট যুদ্ধবিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রেতা হতে যাচ্ছে আজারবাইজান!
আজারবাইজান তার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে চলতি ২০২৪ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ১.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে অজানা সংখ্যক অত্যাধুনিক জেএফ-১৭ থান্ডার (ব্লক-৩) লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট ক্রয়ের চুক্তি করে। মূলত এই ১.৬ বিলিয়ন ডলার চুক্তিমূল্যের আওতায় খুব সম্ভবত ৩০টি সিঙ্গেল সিটের জেএফ-১৭ (ব্লক-৩) যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেইন্টেনেন্স, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং ওয়েপন্স প্যাকেজের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত ২৫শে সেপ্টেম্বর আজারবাইজানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার তরফে জানানো হয় যে, গত মাসে অনুষ্ঠিত ডিফেন্স এক্সপ্রো (Adex 2024) তে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি জেএফ-১৭ (ব্লক-৩) থান্ডার যুদ্ধবিমান উপস্থাপন করা হয়েছিল। তাছাড়া পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স খুব সম্ভবত ইতোমধ্যেই প্রথম ব্যাচে কিছু সংখ্যক এই সিরিজের যুদ্ধবিমান আজারবাইজানের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন করেছে।
পাকিস্তান ও চীনের যৌথ প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার (ব্লক-৩) লাইট যুদ্ধবিমান হচ্ছে এই সিরিজের সবচেয়ে অ্যাডভান্স ও উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান। যাকে পূর্বের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের সকল সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি অপসারণ করে নতুন ইঞ্জিন, এভিয়নিক্স সিস্টেম এবং আধুনিক অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। ব্লক-৩ সিরিজের যুদ্ধবিমান পাকিস্তান প্রথম গত ২০১৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্বের সামনে উন্মোচন করে এবং এর সিরিয়াল প্রডাকশন লাইন হয়ত গত ২০২০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর চালু করা হয়।
এই সিরিজের এয়ারক্রাফটে অত্যাধুনিক ফিচার হিসেবে এনআরআইইটি/ সিইটিসি কেএলজে-৭এ এয়ার-কুলড এয়ারবর্ন ফায়ার-কন্ট্রোল অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিকলি স্ক্যানড অ্যারে (এইএসএ) রাডার সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া এটিতে ডিজিটাল ফ্লাই-বাই-ওয়্যার ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (আইআরএসটি) সিস্টেম, একটি হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লে অ্যান্ড সাইট (এইচএমডিএস) সিস্টেম এবং একটি মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (এমএডাব্লিউএস) ইনস্টল করা হয়েছে।
এই যুদ্ধবিমানে রাশিয়ার তৈরি ক্লিমভ আরডি-৩৩ আফটার বার্নার টার্বোফ্যান ইঞ্জিনের কিছুটা নিম্ন মানে আরডি-৯৩এমএ ভেরিয়েন্টের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিনা ৪৯.৪ কিলোনিউটন শক্তি উৎপন্ন করে। তবে পাকিস্তান অদূর ভবিষ্যতে এই ইঞ্জিনের পরিবর্তে আরো শক্তিশালী চীনের তৈরি একটি গুইঝো (Guizhou) ডাব্লিউএস-১৩ আফটার বার্নার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন দ্বারা রিপ্লেস করবে। যা খুব সম্ভবত সর্বোচ্চ ৫৬.৭৫ কিলোনিউটন শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
চীন ও পাকিস্তানের মিডিয়ার ভাষায় জেএফ-১৭ (ব্লক-৩) থান্ডার এয়ারক্রাফট হচ্ছে একটি ৪++ প্রজন্মের লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট। এটিতে আধুনিক যুগের একটি উন্নত ইলেকট্রনিক্স ওয়ার-ফার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এর এই যুদ্ধবিমানের ওজন কমানো এবং যতটা সম্ভব রাডার ক্রস সেকশন (আরসিএস) হ্রাস করার জন্য এর এয়ার ফ্রেমে কম্পোজিট ম্যাটারিয়াল ব্যবহার করা হয়েছে।
এই যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম স্পিড হচ্ছে ১.৬ ম্যাক বা ১,৯১০ কিলোমিটার। এর কমব্যাট রেঞ্জ ৯০০ কিলোমিটার হলেও এটি ড্রপ ট্যাংকে এক্সট্রা ফুয়েল নিয়ে ১,৭৪১ কিলোমিটার পর্যন্ত এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। এর ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৪ হাজার কেজি। এটি তার ৮টি হার্ড পয়েন্টে এয়ার টু এয়ার মিসাইল, এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইলসহ এন্টিশিপ মিসাইল বহন করার উপযোগী করে তৈরি করেছে চীন ও পাকিস্তান।
বিশেষ করে চীনের তৈরি ১৪৫ কিলোমিটার রেঞ্জের পিএল-১৫ই (এক্সপোর্ট ভার্সন) এয়ার টু এয়ার (বিভির) মিসাইল ইনস্টল করার সুবিধা রাখা হয়েছে। যাকে চীন তাদের একটি গেম চ্যাঞ্জার ওয়েপন্স হিসেবে প্রচার করে থাকে। তাছাড়া এটিতে গাইডেড এন্ড আনগাইডেড বম্বস ইন্সটল করার পাশাপাশি একটি অত্যাধুনিক (২৩ এমএম) জিএসএইচ-২৩ টুইন ব্যারেল অটো ক্যানন ইনস্টল করা হয়েছে।
পাকিস্তান এর প্রডাকশন লাইন গত ২০২০ সালে শুরু করলেও এটি গত ২০২২ সালের প্রথমদিকে বিশ্বের সামনে রোল আউট ইমেজ রিলিজ করে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে গত ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রথম একটি ইউনিট সার্ভিসে আসে। তবে এই যুদ্ধবিমানে চীনের তৈরি অধিকাংশ প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহার করা হলেও চীনের বিমান বাহিনী কিন্তু জে এফ-১৭ থান্ডার সিরিজের কোন যুদ্ধবিমান অপারেট করে না কিংবা ভবিষ্যতেও ব্যবহার করার কোন পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি।