ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে এবার ভয়াবহ নিউক্লিয়ার ওয়ার বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রন্তে বিশ্ব!
সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতার একেবারে শেষের দিকে এসে অবিশ্বাস্যভাবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন। মূলত এই ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই যুদ্ধের ১ হাজার তম দিনে আমেরিকার সরবরাহ করা ম্যাক্সিমাম ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের প্রায় ৬টি ট্যাকটিক্যাল (এটিএসিএমএস) মিসাইল ব্যবহার করে রাশিয়ার রাজধানীর কাছাকাছি ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। রাশিয়া ৫টি মিসাইল আকাশেই ইন্টারসেপ্ট করার দাবি করলেও এই মিসাইল হামলায় রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রাগার মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের সবুজ সংকেত পেয়ে তাদের সরবরাহ করা স্ট্রোম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। তবে এর পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের উপর সরাসরি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় হামলা চালিয়েছে। আর রাশিয়ার এই ব্যালেস্টিক মিসাইলের হামলার মাধ্যমে সারা বিশ্ব এই প্রথম বার সরাসরি কোন দেশের উপর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের হামলা প্রত্যক্ষ করল। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক তথ্য হলো যে, রাশিয়ার পাশাপাশি বর্তমানে আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের নিউক্লিয়ার অস্ত্র সমৃদ্ধ অধিকাংশ দেশই এক রকম নীরবেই কোন এক অজানা দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রাণঘাতী যুদ্ধের প্রস্তুতু নিতে শুরু করে দিয়েছে।
তবে আশার কথা হলো যে, রাশিয়া এই যাত্রায় (আইসিবিএম) মিসাইলে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের পরিবর্তে কনভেনশনাল হাই এক্সপ্লুসিভ রি-এন্ট্রি (এমআইআরভি) ওয়ারহেড ব্যবহার করেছে। রাশিয়ার তরফে এ নিয়ে অবশ্য এখনো পর্যন্ত কিছু বলা না হলেও মূলত যা ছিল কিনা পশ্চিমা বিশ্বের ন্যাটো জোটের জন্য পরমাণু যুদ্ধের এক আগাম সতর্কবার্তা। যদিও গত ২০২২ সালে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় দেশটির প্রভাবশালী নেতারা একাধিকবার পশ্চিমা বিশ্বের উপর নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছে। এদিকে ১৯৮০ সালের পর প্রথম বারের মতো গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ডংফেং-৪১ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষা চালিয়ে নিজের সামরিক শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে রেড জায়ান্ট চীন।
তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এবার সরাসরি (আইসিবিএম) মিসাইলের ব্যবহার অদূর ভবিষ্যতে এক অশুভ নিউক্লিয়ার ওয়ার বা ভয়াবহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত ফুটে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে মিসাইল হামলাকে পুতিন প্রশাসন তাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হিসেবে মনে করে এবং তার যে কোন মূল্যে এর পালটা প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তরের স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের একাধিক স্যাটেলাইট ডাটা, জিপিএস ও অন্যান্য কমান্ড সেন্টারের কারিগরি সহায়তায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার একেবারে অভ্যন্তরে সুনিদির্ষ্ট টার্গেটে মিসাইল হামলা চালানো হলে ধরেই নেয়া হবে যে পশ্চিমা বিশ্ব এখন সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে রাশিয়া নিজেকে সুরক্ষার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিঘাত করবে।
রাশিয়া খুব সম্ভবত পরোক্ষভাবে পশ্চিমা বিশ্বকে শিক্ষা দিতেই এই প্রথম বার অন্য কোন দেশের উপর কনভেনশনাল ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ৫,৮০০ কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-২৬ (Rubezh) ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ফায়ার করে। যাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক অশুভ আলামত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং বিষয়টি ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর টার্মিনাল ফেজে ম্যাক ২০ বা প্রতি ঘণ্টায় ২৪,৫০০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন আরএস-২৬ (আইসিবিএম) মিসাইলে ৪টি রি-এন্ট্রি (এমআইআরভি) নিউক/কনভেনশনাল ওয়ারহেড বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি প্রথম সার্ভিসে আসে গত ২০১১ সালে।
আসলে বর্তমানে রাশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সেস ইউনিটের হাতে আনুমানিক মোট ৫,৫৮০টি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের বিশাল মজুত রয়েছে। তার পাশাপাশি ১,৭১০ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল মজুত রয়েছে। যার মধ্যে ভূমি ভিত্তিক সাইলো বেসড এবং ভ্রাম্যমাণ ট্রান্সপোর্টার ইরেকটার লঞ্চার ট্রাক চালিত (আইসিবিএম) মিসাইল রয়েছে মোট প্রায় ৮৭০টি থেকে ৯০০টি। তাছাড়া নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন ভিত্তিক (এসএলবিএম) ব্যালেস্টিক মিসাইল রয়েছে ৬৪০টি এবং লং রেঞ্জের হেভি এয়ার বোম্বার বিমানের উপযোগী নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ব্যালেস্টিক মিসাইল ২০০টি।
রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কৌশলগত অস্ত্র ব্যবহার বা নিউক্লিয়ার ডকট্রিন / স্ট্র্যাটিজি পরিবর্তন করেছে। নতুন এই নীতির আলোকে ইউক্রেন বা অন্য কোন দেশ রাশিয়ার অভ্যন্তরে যদি কোন পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের সরবরাহ করা কনভেনশনাল বা প্রচলিত অস্ত্র আঘাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে রাশিয়া সরাসরি কৌশলগত নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। আর ঠিক এই নতুন ডকট্রিন স্ট্র্যাটিজি আলোকে রাশিয়া আগাম কোন পূর্ব সতর্কতা না দিয়েই ইউক্রেনের উপর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ফায়ার করে আমেরিকাসহ সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বকে এক নতুন ভয়াবহ নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আগাম হুমকি প্রদান করেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়েটার্স, ইউকিপিডিয়া,