বিশ্ব মানের প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রথম সারিতে রয়েছে ফিনল্যান্ড!

জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো’র দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ইউরোপের একটি শান্তিপ্রিয় দেশ ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ডের সরকার মূলত বিগত কয়েক দশক থেকেই তাদের দেশে বিশ্ব মানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিক্ষকদের সর্বোচ্চ আর্থিক নিরাপত্তা, সুবিধা ও সম্মানের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।

Oct 17, 2024 - 15:04
বিশ্ব মানের প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রথম সারিতে রয়েছে ফিনল্যান্ড!
ফিনল্যান্ডের একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বিশেষ করে চলতি ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী ফিনল্যান্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত একজন সম্মানিত শিক্ষক প্রতিমাসে গড়ে ৩,৫১০ ইউরো থেকে ৫,৫৮০ ইউরো পেয়ে থাকেন। যা কিনা আমাদের দেশের মুদ্রা টাকার হিসেবে প্রায় ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৮০ টাকার সমান হয়। তাছাড়া এর সাথে আরো কিছু ভাতা ও সুবিধা ভোগ করেন দেশটির শিক্ষকেরা৷ যা আমাদের দেশে কল্পনাও করা সম্ভব নয়।

 
তবে এটা ঠিক যে, দেশটিতে শুধু স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার কোন সুযোগ নেই। সবার আগে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক হলে তাকে অ্যাকাডেমিক স্টাডি শেষ করে এক বছর বা নির্দিষ্ট মেয়াদি শিক্ষকতার পেশার জন্য একটি ডিপ্লোমা কোর্স সমাপ্ত করতে হয়। যা কিন্তু মোটেও সহজ কোন কাজ নয়। এক্ষেত্রে শুধু অতি মেধাবীরাই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কেবল শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় প্রবেশ করতে পারেন।


তাছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের শিশুরা কিন্তু ৭ বছরের আগে স্কুলের যায় না। দেশটিতে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির অযোগ্য হিসাবে গণ্য করা হয়। ফিনল্যান্ডে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক (বেসিক এডুকেশন) প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে অবশ্য শিশুর ৬ বছর বয়সে এক বছর ঐচ্ছিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তবে এ সকল পর্যায়ে শিশুর শিক্ষার সকল খরচ সরকার বহন করে। 


বিদ্যালয়ে শিশুদের প্রতি বছর কোন চূড়ান্ত মূল্যায়ন বা বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। শুধু শিশুর ১৬ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ অর্জন করে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়। তার আগে এই দীর্ঘ ৯ বছর তাদের কোন ধরনের বার্ষিক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে হয় না শিশুদের। দেশটির বিদ্যালয়গুলোতে হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজ বলে কিছুই নেই। 


প্রতিটি বিদ্যালয়ের শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতাগুলো শ্রেণিতেই ধারাবাহিকভাবে ও ধাপে ধাপে ক্লাসেই সমাপ্ত করে শিশুকে বাড়িতে পাঠানো হয়। এতে করে শিশুর মনে বাড়িতে হোমওয়ার্ক করা নিয়ে কোন ধরনের আতঙ্ক বোধ করে না। তাছাড়া ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে গতানুগতিক ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় রোল নম্বর বলতে কিছুই নেই। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা একটি আইডি নম্বর আছে। তবে পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফলের কোন মেধাক্রম নেই। 


বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে কম সময় ক্লাস করে ফিনল্যান্ডের শিশুরা। তবু তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক আধুনিক এবং মান সম্মত বলেই মনে করা হয়। তাছাড়া দেশটি তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন ভাবে ঢেলে সাজিয়েছে যে, একজন মধ্য মানের শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সমাপ্ত করে পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ না করেই তার যোগ্যতা ও চাহিদা মাফিক কর্ম শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশ তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং প্রয়োজনে অর্থায়ন করে।

সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.