ইরান এবার রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে!
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনা এবং হুমকি মোকাবেলায় ইরান সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের আধুনিকায়ন শুরু করেছে। বিশেষ করে ইরানের বিমান বাহিনীর সত্তর ও আশির দশকের অতি পুরোনো যুদ্ধবিমানের স্থলে রাশিয়ার তৈরি সুখই এসইউ-৩৫ই সিরিজের অ্যাডভান্স যুদ্ধবিমান পর্যায়ক্রমে অর্ন্তভুক্ত করা হবে। এতদিন বিষয়টিকে পশ্চিমা মিডিয়ার গুজব মনে করা হলেও গতকাল ২৭শে জানুয়ারি সোমবার ইরানের (আইআরজিসি) সামরিক বাহিনীর তরফে প্রকাশ্যে জানানো হয় যে, ইরান তাদের এই প্রথম বার রাশিয়ার তৈরি আধুনিক সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করতে যাচ্ছে।
আসলে মধ্যপ্রাচ্য ইউক্রেনে চলামান সামরিক উত্তেজনার মুখেই ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা এবং দীর্ঘ মেয়াদি কৌশলগত সম্পর্কের স্থাপনের মধ্যেই নতুন করে অজানা সংখ্যক এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরান। তবে এই যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে তা প্রকাশ করা না হলেও মনে করা হয় ইরান তার বিমান বাহিনীর অতি পুরোনো এফ-১৪ টমক্যাট এবং এফ-৪/৫ সিরিজের যুদ্ধবিমানের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে আনুমানিক ৬০টি থেকে ১০০টি এই জাতীয় হেভি এন্ড ডেডিকেটেড রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজস্ব প্রযুক্তির ডিফেন্স সিস্টেম বিশেষ করে কমবাট ড্রোন এবং ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিজাইন ও তৈরিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করলেও বাস্তবে কিন্তু ইরানের বিমান বাহিনীর কমব্যাট এয়ার ফ্লিটে খুব ভালো মানের ও অ্যাডভান্স জেট ফাইটার নেই। তাছাড়া তাদের হাতে থাকা যুদ্ধবিমানের অধিকাংশই কিন্তু অনেক আগেই সার্ভিস লাইফ শেষ করে ফেলেছে। চীন এবং রাশিয়ার সাথে সখ্যতা থাকলেও ইরান কিন্তু বিগত দুই দশকেও তাদের বিমান বাহিনীর আধুনিকায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিশ্চিত করতে পারেনি।
বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান হিসেবে সত্তর কিংবা ৮০ এর দশকে ক্রয় করা এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান রয়েছে হয়ত মাত্র প্রায় ১৮টি থেকে ২৪টি। তাছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এয়ার স্টাইক কমব্যাট এয়ারক্রাফটের মধ্যে সত্তর, আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের তৈরি মিগ-২৯ রয়েছে প্রায় ৪০টি। তার পাশাপাশি আমেরিকার তৈরি এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান আ ৬০টি, এফ-৫ টাইগার যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯টি। এছাড়া ইরানের হাতে লং রেঞ্জ এবং হেভি এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার মতো কোন এয়ারক্রাফট এক রকম নেই বললেই চলে।
যদিও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের তৈরি বিপুল সংখ্যক অতি পুরোনো এবং প্রায় অচল কমব্যাট এয়ারক্রাফট হিসেবে এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান ২৬টি থেকে ২৮টি, এসইউ-২২ যুদ্ধবিমান ২০টি এবং চীনের তৈরি জে-৭ লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট রয়েছে মাত্র ২৪টি। তাছাড়া ফ্রান্সের তৈরি অতি পুরোনো মিরেজ-এফ১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ২২টি। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এই বিপুল সংখ্যক পুরোনো কমব্যাট এয়ারক্রাফট ইরান এবং তার বন্ধু উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ কীভাবে সচল রেখেছে তা এক নতুন বিস্ময় হিসেবে থেকেই যাচ্ছে।
তাছাড়া ইরানের যুদ্ধবিমান বহরের মধ্যে আবার কিনা ২০% এর কাছাকাছি যুদ্ধবিমান হচ্ছে ইরাকের সাবেক সাদ্দাম হোসেন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান। যা কিনা ১৯৯০-৯১ সালের দিকে গলফ ওয়ার চলাকালে ইরাকের পাইলটেরা যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরানে পালিয়ে যায়। যদিও ইরান কিন্তু তার নিজস্ব প্রযুক্তি এবং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু সংখ্যক হেসা কাউসার, হেসা শিক্কা এবং হেসা আজরাখশ নামের গ্রাউন্ড অ্যাটাক ফ্যাসিলিটির লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান সার্ভিসে এনেছে। তবে তা নিশ্চিতভাবেই পশ্চিমা বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিন্তু মোটেও যথেষ্ট নয়।
ইরান নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অ্যাডভান্স কাহার-৩১৩ স্টেলথ প্রোটোটাইপ যুদ্ধবিমান তৈরি করলেও তা কিন্তু এখনো পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে সার্ভিসে আসেনি এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে হয়ত এর ম্যাসিভ প্রোডাকশন লাইন চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট ফিক্সড উইংস ক্যাপাবিলিটি শক্তিশালী না হলেও অতি সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ডিফেন্স রিলেটেড নিজস্ব কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তিতে উত্থান পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেশটি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের নতুন প্রজন্মের শাহেদ-১৪৯ হেভি কমব্যাট ড্রোন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, রয়েটার্স।