বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপনে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি ভিত্তিক "আরামকো" কোম্পানি!
সৌদি আরবের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী তেল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ কোম্পানি "আরামকো" সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নতুন একটি ক্রুড ওয়েল রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপনের প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যা হয়ত বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এ নিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে দায়িত্বরত সৌদি রাষ্ট্রদূত এশা ইউসুফ এশা আল দুহাইলান জানান যে, "আরামকো" বাংলাদেশে একটি অত্যাধুনিক অয়েল রিফাইনারি প্লান্ট নির্মাণ করতে চায়।
সৌদি আরবের নিজস্ব বিনিয়োগে এই তেল শোধনাগার স্থাপন করা সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এবং অত্র অঞ্চলের জন্য পেট্রোলিয়ম পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। তাছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল রপ্তানির মতো বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, এই ধরনের অয়েল রিফাইনারি বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে। বর্তমানে বিশ্বের সেরা এবং ৬ষ্ঠ শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানি হচ্ছে সৌদি আরবের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ কোম্পানি "আরামকো"।
কোম্পানিজ মার্কেট ক্যাপ এর ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী আরামকো কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু বা বাজার মূলধন হচ্ছে ১.৭৯৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বাজার মূলধনের দিক থেকে বর্তমানে সৌদি আরামকো বিশ্বের ষষ্ঠতম মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। যদিও গত ২০২১ সালের শেষের দিকে তাদের মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালুর পরিমাণ ছিল প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়া ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসন এবং করোনা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়।
সৌদি ভিত্তিক আরামকো কোম্পানির প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, গত ২০২৪ সালে কোম্পানিটি সারা বছরে ৪৮৮.৯৮ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে। যা গত ২০২৩ সালে ৪৯৫.৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২২ সালে তা ছিল ৬০৪.১৭ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ২০২৪ সালের থার্ড কোয়ার্টারে নিট মুনাফা অর্জন করে ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার এবং তা গত ২০২৩ সালে থার্ড কোয়ার্টারে নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার। আর "আরামকো" গত ২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ মোট ১০৯.৩৮৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যে নিট মুনাফা অর্জন করেছিল।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপে বিশ্ব জ্বালানি তেলের বাজারে চরম অস্থিরতার মধ্যেই "আরামকো" আন্তর্জাতিক বাজারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ম পণ্য এবং গ্যাস রপ্তানি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে। যদিও বৈশ্বিক মহামন্দা কারণে গত ২০২৪ সালের শুরু থেকে তাদের রপ্তানি আয় আনুপাতিক হারে কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেট্রোলিয়ম পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বড় ধরনের প্রভাব ও গুরুত্ব বজায় রেখেছে সৌদি আরবের এই রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
আজ থেকে ৯১ বছর আগে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আরামকো কোম্পানির সদর দপ্তর সৌদি আরবের দাহরানে অবস্থিত। তাদের কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রমাণিত অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, তেলের পরিমাণ হতে পারে আনুমানিক ২৭০ বিলিয়ন ব্যারেল এবং এর পাশাপাশি গ্যাসের মজুত হতে পারে প্রায় ২৮৮.৪ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফুট। তাছাড়া গত ২০২৪ সালে কোম্পানিটির তেলের মোট উৎপাদন ছিল প্রতিদিন গড়ে ১২.৭ মিলিয়ন ব্যারেল। গত ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৬৬০.৭৮৪ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার মধ্যেও বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল আমদানিকারক দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই রাশিয়ার পাশাপাশি সৌদি আরবের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ক্রুড ওয়েল আমদানি করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিগত পাঁচ দশক থেকে চীন ও ভারতের মধ্যে চরম শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক বজায় থাকলেও সৌদি আরবের সাথে এই দেশ দুটির সাথে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক। তাছাড়া সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন সালমান শাসিত আমেরিকার প্রবল আপত্তিকে পাত্তা না দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে ডলারের পাশাপাশি চিনের নিজস্ব শক্তিশালী মুদ্রা ইউয়ান এবং রাশিয়ার মুদ্রা রুবল সংরক্ষণ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: আরামকো, উইকিপিডিয়া, কোম্পানিজ মার্কেট ক্যাপ।