নতুন করে মৌল আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে বিজ্ঞানীরা!
অতি সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে ১১৯তম এবং ১২০তম মৌল আবিষ্কারের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল বিজ্ঞানী এই নতুন মৌল আবিষ্কারের গবেষণার সাথে যুক্ত রয়েছেন। আর তাদের এই গবেষণাটি চলতি ২০২৪ সালের ২১শে অক্টোবর ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার জার্নাল এ প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞানীরা আসলে প্লুটোনিয়াম-২৪৪ আইসোটোপে চার্জিত টাইটেনিয়াম পরমাণু দিয়ে আঘাত করেন। এতে তৈরি হয় পর্যায় সারণির অন্যতম একটি ভারী মৌল 'লিভারমোরিয়াম'। এর পারমাণবিক সংখ্যা হচ্ছে ১১৬। আর এতেই তারা ঠিক নতুন করে দুটি ভিন্ন মৌলের অস্তিত্ব আবিষ্কার কিংবা খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে হয়ত রসায়নের পর্যায় সারণিতে ১১৯তম এবং ১২০তম মৌল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত কিংবা কৃত্রিমভাবে তৈরি বিভিন্ন মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল,অমিল এবং এ সকল ধর্মের ক্রম পরিবর্তন দেখানোর জন্য মৌলসমূহকে কতগুলো আনুভূমিক সারি ও উলম্ব কলামে সাজিয়ে যে তালিকা বা সারণি প্রস্তুত করা হয় তাকেই মূলত পর্যায় সারণি বলে। তাছাড়া বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত পর্যায় সারণিতে মোট ১১৮টি মৌলের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।
এই মোট ১১৮টি মৌলের মধ্যে ৯৮টি মৌল প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং অবশিষ্ট ২০টি মৌল বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে তৈরি করেছেন। তবে কোন কোন ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, প্রাকৃতিক মৌল ৯২টি এবং মানুষের কৃত্রিমভাবে তৈরি করা মৌল ২৬টি দেখানো হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, গবেষণাগারে মানুষের তৈরি কৃত্রিম মৌলের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব হয়ত এই সুবিশাল মহাবিশ্বে অন্য কোথাও অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে।
তবে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ৯২টি কিংবা ৯৮টি মৌলের মধ্যে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে এবং তার গভীরে কিন্তু অক্সিজেন মৌল সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। আবার বায়ুমণ্ডলে প্রাপ্ত মৌলের সাথে ভূপৃষ্ঠে প্রাপ্ত মৌলের পরিমাণের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মৌলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে নাইট্রোজেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে থাকা মৌলের মধ্যে অক্সিজেন ৪৬.১%, সিলিকন ২৮.২%, অ্যালুমিনিয়াম ৮.২৩%, লোহা ৫.৬৩%, ক্যালসিয়াম ৪.১৫%, সোডিয়াম ২.৩৬%, ম্যাগনেসিয়াম ২.৩৩%, পটাশিয়াম ২.০৯%, টাইটানিয়াম ০.৫৬৫% এবং ০.১৪% হাইড্রোজেন মৌল রয়েছে। তাছাড়া বাকি অন্যান্য উপাদান/ মৌল থাকতে পারে হয়ত আনুমানিক ০.২১%।
অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে (শুষ্ক অবস্থায়) সর্বোচ্চ পরিমাণের মৌল হিসেবে মজুত রয়েছে নাইট্রোজেন গ্যাস। বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলে থাকা মোট উপাদানের মধ্যে প্রায় ৭৮.০৮৪% নাইট্রোজেন এবং ২০.৯৪৬% অক্সিজেন মৌল রয়েছে। তার পাশাপাশি ০.০৪১% কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস এবং অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস/মৌল রয়েছে হয়ত প্রায় ০.৯৩৫% বা তার কাছাকাছি।
আসলে আধুনিক পর্যায় সারণিতে ১৮ নং শ্রেণিতে বায়ুমণ্ডলের নিষ্ক্রিয় গ্যাস/মৌলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বায়ুমণ্ডলে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের তালিকায় এখনও পর্যন্ত ০.৯৩৪% আর্গন, ০.০০১৮২% নিয়ন, ০.০০০৫২৪% হিলিয়াম, ০.০০০১৯২% মিথেন, ০.০০০১১৪% ক্রিপটন, হাইড্রোজেন ০.০০০০৫৫% হাইড্রোজেন এবং ০.০০০০০৯% জেনন মৌল রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার জার্নাল, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এবং ব্রিটানিকা।
Sherazur Rahman