ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার যেভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষ ডায়বেটিস এর সাথে অনেক ভালোভাবেই পরিচিত। আর ক্যান্সার এর মতো মারাত্মক রোগের নাম তো সবার-ই শোনা। ডায়বেটিসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, টাইপ-১ এবং টাইপ-২। টাইপ-২ আক্রান্ত রোগীদেরই মূলত ইনসুলিন দেয়ার দরকার পরে। কারণ ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত টাইপ-২ ডায়বেটিসের সাথে সম্পর্কিত।
সম্প্রতি গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে এটি ক্যান্সার রোগীদের মধ্যেও উপস্থিত থাকে এবং রোগের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অর্থাৎ ডায়বেটিস এবং ক্যান্সার একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বহুমূত্ররোগ বা ডায়বেটিস হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা একদমই কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন দেহ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
ইনসুলিন (Insulin) হলো অগ্ন্যাশয়ের প্রধান হরমোন। এটি এক ধরনের পলিপেপটাইড যা গ্লুকোজকে রক্ত থেকে কোষের মধ্যে প্রবেশ করা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন মূলত অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো অর্থাৎ
আইল্যেটস অব ল্যাঙ্গারহেন্স-এর বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত হয়।
১৯২০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে ক্যান্সার রোগীদের প্রস্রাবে মিষ্টি গন্ধ ছিল। প্রথমে এটি চিকিৎসকদের বিভ্রান্ত করেছিল কিন্তু তারা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন যে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে হয়েছে। মিষ্টি গন্ধযুক্ত প্রস্রাব থেকে বোঝা যায় যে ক্যান্সার শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
গবেষণাটির প্রধান লেখক লিকে সাইলো বলেছেন যে,
"ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দেয় না। তাই ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে একই প্রভাব তৈরি করতে আরও ইনসুলিন লাগে।”
গবেষণাটির দ্বিতীয় প্রধান লেখক জোয়ান মারমল বলেন যে,
"আমরা কোষ, প্রাণী এবং কিছু মানব গবেষণা থেকে জানি যে ইনসুলিন একটি বৃদ্ধি করার হরমোন এবং এটি ক্যান্সার কোষের উপরও একই প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ উচ্চ মাত্রার ইনসুলিন ক্যান্সার কোষকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।"
ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা শুধু ডায়বেটিস নয় বরং ক্যান্সার কোষদের বিভাজন ও বৃদ্ধিরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা পেশিতে প্রোটিন তৈরিতে প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ শরীর যদি ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে পেশির ভর এবং শক্তি হারিয়ে যায়। এটি অনেক ক্যান্সার রোগীর জন্য একটি বিশাল সমস্যা।
লিকে সাইলো আশা করেন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করবেন।
তিনি বলেন যে,
"যদি তারা দেখতে পায় যে রোগী ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতায় ভুগছেন তবে তাদের উচিত এটির চিকিৎসা শুরু করা। আমরা ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতার চিকিৎসা করতে সক্ষম কারণ আমাদের এই অবস্থা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু আমরা এটিকে শুধু টাইপ-২ ডায়বেটিসের সাথে সম্পর্কিত করতে অভ্যস্ত।”
কানিজ নুসরাত / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইটেক ডেইলি