এক ধরনের অদ্ভুত মানষিক রোগী যার নাম স্টকহোম সিন্ড্রোম!
১৯৭৩ সাল । স্টকহোম, সুইডেন। Sveriges Kreditbank-সুইডেনের একটি ব্যাংকে ঘটে একটি ডাকাতির ঘটনা।
দুই জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ জন ব্যক্তিকে। ৬ দিন যাবত তারা তাদেরকে জিম্মিরা রাখে। এই ৬ দিনে চলে ন পুলিশ ডাকাতদের দর কষাকষি। ৬ দিন শেষে জিম্মিরা যখন মুক্তি পেলেন তখন বিশ্ববাসী তাদের আচরণে লক্ষ্য করলেন এক অদ্ভুত ব্যাপার। তারা ডাকাতদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশের পাশাপাশি ডাকাতদের মামলা লড়ার জন্য অর্থ জোগাড়ে ধরনা দেওয়া শুরু করে দিলেন!
এমন কি জিম্মি থাকাকালীন সমযে় সুইডেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলফ পালমকে অনুরোধ করেন কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগ না করতে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মানুষ পরিচিত হয় এক নতুন ধরনের মানসিক অবস্থার সাথে স্টকহোম সিন্ড্রোম।
এখানে বলে রাখা ভালো, স্টকহোম সিন্ড্রোম কে মানসিক ব্যাধি বলতে অনেকের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। Diagnostic and Statistical manual for mental disorder (DSM) স্টকহোম সিন্ড্রোম কে মানসিক রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
তাহলে কি এই স্টকহোম সিন্ড্রোম?
এটি একটি সাইকোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া, যেখানে একজন ভিক্টিম তার নিপীড়কের বা তার হরণকারীর প্রতি সহমর্মিতা বোধ করতে শুরু করে এবং পুলিশ বা আইন প্রযে়াগকারী সংস্থার প্রতি অনাস্থা ও অসহযোগিতা প্রকাশ করে
এই অদ্ভুত আচরণের মূলে রযে়ছে বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি। মানুষ যখন তার আটককারীর হাতে প্রাণ হারানোর শৃংকায় থাকে, স্বভাবতই তার নিজের জীবনের জন্য সে তার আটককারীর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পডে়। আটককারী প্রাণনাশের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার বিনিময়ে জিম্মির আস্থা এবং সহমর্মিতা লাভ করে। আটক রেখে নির্যাতন কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুখ্য হয়ে উঠে বেঁচে থাকা। প্রাণে বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতিতে জিম্মির মনে তখন আটককারীর প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক এতটাই হয় যে পুলিশ বা আইন প্রযে়াগেকারীর সংস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়। আর এভাবেই আটককারী এই স্টকহোম সিন্ড্রোমকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে।
আবার কখনো স্টকহোম সিন্ড্রোম এতটাই ব্যক্তিকে সম্মিহিত করে ফেলে যে নিজেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পডে়। এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল পেট্রেসিয়া হারস্টের বেলায়। তিনি সিম্বাযে়ানিজ লিবারেশন আর্মির হাতে অপহরণের শিকার হন ১৯৭৪ সালে। অপহরণের ১০ সপ্তাহের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ব্যাংকে ডাকাতে লিপ্ত হন তার অপহরণকারীদের সাথে।
ম্যারি ম্যাকেলরয় ১৯৩৩ সালে, ২৫ বছর বয়সে ৪ জন ব্যক্তি কর্তৃক অপহৃত হন। অস্তের মুখে একটি ফার্মহাউসের পরিত্যক্ত কক্ষে তাকে বন্দি রাখা হয়। তার মুক্তির বিনিময় অপহরণকারীরা মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ চেয়েছিল। এতদসত্ত্বেও ম্যারি জনসম্মুখে তার অপহরণকারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিল। এমনকি তার অপহরণকারীদের সাজার প্রতিবাদে আত্মহত্যা করেন তিনি।
নাতাশা ক্যাম্পচ মাত্র ১৯৯৮ সালে ১০ বছর বয়সে অপহৃত হন। তাকে রাখা হয় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড সেলে প্রায় ৮ বছর, করা হয় নির্যাতন,নিপীড়ন। মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দেয়া হযে়ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি নাতাশা তার অপহরণকারী উলফগ্যাং প্রিক্লোপিলের আত্মহত্যার ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
১৯৭৯-৮১ সালে ইরানে জিম্মি অবস্থার সময় স্টকহাম সিন্ড্রোম বিশ্বজুড়ে তার অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করে। ১৯৮৫ সালে TWA 847 বিমান ছিনতাই, জাপানি দূতাবাসে জিম্মি অবস্থা সর্বক্ষেত্রেই স্টকহোম সিন্ড্রোম এর বহিঃপ্রকাশ আমাদের চোখে পড়ে।
স্টকহোম সিন্ড্রোম এক ধরনের মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বা coping mechanismI কোন একটি অপহরণের ঘটনা মেনে নেওয়ার প্রবণতা থেকে এই অদ্ভুত আচরণের জন্ম। এর মধ্য দিয়ে ভিক্টিম তার ট্রমা বা বিভীষিকা ভুলে থাকতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে উচিত দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।