মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত কতটা ক্ষতিকর?
রাত হলেই ঘুম চলে আসে। ঘুমের মাধ্যমেই সাধারণত আমাদের ক্লান্তি দূরীভূত হয়। তবে যারা নাইটশিফট বা রাত জেগে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে এইটা আলাদা। যখন বাকিরা ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, ঠিক তখনই তাদের শরীর জেগে থেকে কাজ করায় ব্যস্ত থাকে। এই ঘুমের ব্যাঘাত তাদের শরীরের উপর অনেকটা প্রভাব ফেলে। যেমন তাদের বেশিরভাগই ওজন বেড়ে যাওয়া, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ডিপ্রেশন এবং হার্টের দুর্বলতায় ভোগেন।
দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় সাধারণ মানুষের জেগে থাকা ও ঘুমের একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে। যাকে সারকাডিয়ান ছন্দ (Circadian rhythm) বলে.
মানুষ যারা দিনে সকাল ৯-৫ টা পর্যন্ত কাজ করে তারা দিনের আলোতে কাজ করে। এতে তাদের সারকাডিয়ান ছন্দ একই থাকে। অপরদিকে যারা শিফটে কাজ করে তাদের এই সারকাডিয়ান ছন্দ বিঘ্নিত হয়ে যায়।
হার্ভার্ড মেডিক্যালের ঝোউ বলেন,
"তারা শুধু নিজের দেহের বিরুদ্ধেই কাজ করছে না। তারা মহাবিশ্বের ছন্দের বিপরীতে গিয়েও কাজ করছে।"
ঘুমের ব্যাঘাত মানুষের খাবার খাওয়ার সময়সূচিসহ স্বাস্থ্যের উপরও অনেক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা যায় যখন একটি প্রাণীর জেগে থাকা বা ঘুমানোর চক্র দিন বা রাতের সঙ্গে সংগত হয় না তখন তা তার ক্ষুধায় পরিবর্তন আনে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী ইঁদুরের সারকাডিয়ান ছন্দের উপর একটি পরীক্ষা করেন। ফলস্বরূপ তারা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখতে পান। গবেষকরা ইঁদুরের দৈহিক ছন্দের বিঘ্ন ঘটান। এটি করতে তারা কর্টিকোস্টেরন নামের এক প্রকার হরমোন আলো-অন্ধকারের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন।
করটিকোস্টেরন অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষের ক্ষেত্রে একই কাজ করে। এটি গ্লুকোকটিকয়েড হরমোন। যা জেগে ওঠার কিছু পূর্বে সক্রিয় হয় এবং দিনের আলোতে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
ইঁদুরের কর্টিকোস্টেরনের এই অসময়ে বৃদ্ধির কারণে ব্যাহত হয়েছিল তাদের স্বাভাবিক ছন্দ। যেমন, কর্টিকোস্টেরন প্রাপ্ত ইঁদুর, ইন-সিঙ্ক প্রাণী এবং ইঁদুরের একটি নিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠী যারা কোনও ইনফিউশন পায়নি- সকলকে প্রতিদিন একই পরিমাণ খাবার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় যে বাড়তি হরমোন প্রাপ্ত ইঁদুরেরা তাদের সারা দিনের খাবারের প্রায় অর্ধেক খাবার বিশ্রাম করার সময় খেয়ে ফেলে।
যদিও এই পরিবর্তিত সময় তাদের ওজন বৃদ্ধির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তবে এটি তাদের স্বাভাবিক খাবার গ্রহণের ধরণ থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম ছিল – যা থেকে গবেষকরা খুঁজে পান যে এটি তাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী জিনের অসময়ে করা কাজের ফল।
এই অসামঞ্জস্যক কর্টিকোস্টেরন মাত্রাযুক্ত ইঁদুরের কিছু জিনের কার্যকারিতায় একটি ভিন্নতা দেখা যায়। সেটি হলো এই ইঁদুরগুলোর সেসকল জিন যেগুলো ক্ষুধাকে উদ্দীপ্ত করার জন্য প্রোটিন তৈরি করে, সেই জিনগুলো উচ্চমাত্রায় কাজ করা শুরু করে, যা সাধারণ অবস্থায় বন্ধ থাকে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিদ স্ট্যাফোর্ড লাইটম্যান বলেন,
"যখন আমরা দিন-রাতের আলো চক্রের সাথে কর্টিকোস্টেরনের স্বাভাবিক সম্পর্ককে ব্যাহত করি, তখন এটি অস্বাভাবিক জিন নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষুধায় পরিণত হয়। "
যারা শিফটে কাজ করে তারা কীভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করবে?
"ছুটির দিনে ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন। এটি সাধারণত বলার চেয়ে করা কঠিন। কারণ ছুটির দিনগুলো আপনি আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে কাটাতে চাইবেন। তবে এই সময়টুকুতে আপনাকে অবশ্যই ঘুমের জন্য এক্সট্রা সময় দিতে হবে”, বলেন ঝোউ।
এছাড়াও আপনি কঠিন শিফটে কাজ করার জন্য যত সময় দিচ্ছেন তা ধীরে ধীরে কম করার চেষ্টা করুন। ব্যবহারিক সমাধানগুলো সন্ধান করুন। যা আপনাকে আরও পর্যাপ্ত ঘুমাতে সাহায্য করবে। শিফটের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সাধারণত কাজের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও দায়িত্ব থাকে।
তবে যতটা সম্ভব অস্বাভাবিক কাজের সময়সূচি পরিবর্তন করে সারকাডিয়ান ছন্দ মেনে চলার চেষ্টা করা উচিত।
আফিয়া জাহান নওশিন / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সাইন্স এলার্ট, হার্ভার্ড হেলথ