সূর্যের অজানা রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পার্কার সোলার প্রোব!
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে দেখেছেন যে, আমাদের সোলার সিস্টেমের মোট ভরের প্রায় ৯৯.৮৬% একাই দখল করে রেখেছে এর কেন্দ্রে থাকা একমাত্র নক্ষত্র সূর্য। আবার আমাদের পৃথিবীর বুকে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে সূর্যের তাপ ও আলোর জন্য।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, মাত্র ১ সেকেন্ডের ১৫ লাখ ভাগের ১ ভাগ সময়ে সূর্য যে পরিমাণ তাপ বা শক্তি উৎপন্ন করে তা দিয়ে আমাদের পৃথিবীর সকল মানুষের চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও শেষ করা সম্ভব হবে না।
আসলে সূর্যের সারফেস তাপমাত্রা ৫,৫০০-৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান হতে পারে। আবার সূর্যের কয়েক হাজার কিলোমিটার ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডল বা করোনার তাপমাত্রা কিনা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গবেষকদের ধারণা মতে, সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা তীব্র মাত্রায় গরম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সূর্যের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। যদিও সূর্যের করোনার এত তীব্র মাত্রায় তাপমাত্রা হওয়ার মূল রহস্য এখনো পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা। আর তা নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণার উদ্দেশ্যে গত ১২ই আগস্ট ২০১৮ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ৬৮৫ কেজি ওজনের পার্কার সোলার প্রোব নামের স্পেস মিশন লঞ্চ করে করে।
নাসার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের ২৮শে এপ্রিল পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের করোনা বলয়ে প্রবেশ করেছিল। আর এই স্পেস প্রোবে থাকা উচ্চ প্রযুক্তির সেন্সর দ্বারা সূর্যের করোনার রহস্যময় তাপমাত্রা নিয়ে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত ডাউনলোড করে সূর্যের অনেক অজানা রহস্য ও নতুন তথ্য উপাত্ত জানতে পেরেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
মানব জাতির পাঠানো প্রথম কোন স্পেস মিশনের অংশ হিসেবে পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডল করোনার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যাবে আগামী ২০২৫ সালে। এ সময় এই স্পেসক্রাফট সূর্যের সারফেস থেকে প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৪.৩ মাইল দূরত্বের কাছাকাছি অবস্থান করবে। আর এর সর্বোচ্চ গতি হবে কিনা প্রতি ঘণ্টায় ৬ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার বা প্রতি সেকেন্ডে ১৯১ কিলোমিটার। যা কিনা আলোর গতির প্রায় ০.০৬৪% সমান হবে।
নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত একাধারে স্পেস মিশন পরিচালনা করবে উচ্চ প্রযুক্তির পার্কার সোলার প্রোব। সূর্য ও তার চৌম্বক ক্ষেত্র-সহ আরও নানা বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সূর্য সম্পর্কে আরো গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে চায় নাসা। যা নিয়ে তাঁরা এখনো পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে নাসা।
তথ্যসূত্রঃ নাসা, স্পেসডটকম, ইউকীপিডিয়া।