শনি গ্রহের এক অতি রহস্যময় উপগ্রহ 'এনসেলাডাস' এ স্ব-চালিত রোবোটিক স্নেক পাঠাতে যাচ্ছে নাসা!
পৃথিবীর বাহিরে এলিয়েন লাইফ অনুসন্ধানে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'নাসা' এবার তৈরি করেছে এক্সোবায়োলজি এক্সট্যান্ট লাইফ সার্ভেয়ার (ইইএলএস) বা এক উচ্চ প্রযুক্তির রোবোটিক ডিভাইস। নাসার তৈরি এই স্ব-চালিত ডিভাইসটি হচ্ছে সাপের আকৃতির মতো দেখতে এক ধরনের অতি উচ্চ প্রযুক্তির অটোনোমাস রোবোটিক স্নেক। এটি যে কোন প্রতিকূল বা বন্ধুর পরিবেশে টিকে থেকে কাজ করতে পারে। যা মূলত পৃথিবীর বাহিরে অত্যন্ত দূরবর্তী কোন গ্রহ বা উপগ্রহে এলিয়েন লাইফ সন্ধান এবং থ্রিডি ম্যাপিং এর মতো জটিল কাজের উপযোগী করে বিশেষভাবে ডিজাইন ও তৈরি করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি।
নাসার প্রকাশিত গত ২০২৩ সালের ১১ মে এর তথ্যমতে, এই এক্সোবায়োলজি এক্সট্যান্ট লাইফ সার্ভেয়ার (ইইএলএস) বা অটোনোমাস রোবোটিক্স স্নেক ডিভাইসের দৈর্ঘ্য ৪.৪ মিটার এবং ওজন প্রায় ১০০ কেজি। অনেকটা সাপের মতো দেখতে এই ডিভাইসটি হচ্ছে আসলে একটি স্ব-চালিত বা অটোনোমাস রোবটিক্স সিস্টেম। যা কিনা একাধিক ও অভিন্ন কিছু সেগমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেটিতে কিনা অ্যাকচুয়েশন এবং প্রপালশন মেকানিজমের পাশাপাশি পাওয়ার, হাইলি অ্যাডভান্স ইমেজিং এন্ড কমিউনিকেশন ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। তার পাশাপাশি এটিতে এক ধরনের ঘূর্ণায়মান প্রপালশন ইউনিট ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিনা ট্র্যাকিং, গ্রিপিং মেকানিজম এবং প্রোপেলার ইউনিট হিসাবে কাজ করতে পারে পানির নিচে।
এই রোবটটি একটি প্লাম ভেন্ট এক্সিট অ্যাক্সেস করতে এবং সারফেসের গভীরে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রের উৎসে অনুসরণ করতে সক্ষম। তাছাড়া অচেনা ও প্রতিকূল পরিবেশে বাসযোগ্যতা এবং এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং ঘেরা গতিশীল ভূখণ্ডের কাঠামো অন্বেষণ করার জন্য এটিকে ডিজাইন করা হয়েছে। আর এই স্নেক রোবোট দ্বারা বরফ আচ্ছাদিত শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস এর গভীরে সফলভাবে মিশন পরিচালনা করার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী নাসা। যা হয়ত অদূর ভবিষ্যতে এক নতুন অজানা রহস্য বিশ্বের সামনে উন্মোচন করবে।
এই প্রজেক্ট নিয়ে নাসা মূলত গত ২০২২ সালে কাজ শুরু করে। এটিকে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে বিশেষ করে অতি শীতল পরিবেশে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই মোবাইল রোবোটিক স্নেক ডিভাইসের মাথায় উচ্চ প্রযুক্তির শক্তিশালী ইমেজিং সেন্সর ইনস্টল করা হয়েছে। যা দ্বারা এটি তার আশপাশের পরিবেশের থ্রিডি চিত্র ধারণ করে তা খুব দ্রুত পৃথিবীতে থাকা নাসার স্পেস কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল স্টেশনে পাঠাতে থাকবে। তাছাড়া এই ডিভাইসে আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। যা দিয়ে কার্যত এটি তার আশপাশের বিদ্যুৎপ্রবাহ, তাপমাত্রাসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে নাসাকে পাঠাবে।
এটিকে মূলত পৃথিবীর বাহিরে অন্য কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে রোবোটিক মিশন পরিচালনা করার জন্য তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে শনি গ্রহের চাঁদ এনসেলাডাস চাঁদের বরফ আচ্ছাদিত উপগ্রহে প্রাণের সন্ধান কিংবা এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব আছে কিনা তা অনুসন্ধানে সহায়তা করবে এই রোবোটিক স্নেক। মাইনাস ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তীব্র ঠান্ডা কিংবা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় টিকে থেকে নাসাকে এই উপগ্রহের বুকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণায় সহায়তা করবে। যদিও এটি স্পেসক্রাফটে চরে এনসেলাডাস পৌঁছতে হয়ত সময় লাগতে পারে আনুমানিক ১২ বছর।
আর নাসা এই দূরবর্তী রহস্যময় উপগ্রহের উদ্দেশ্যে স্পেস মিশন কখন শুরু করবে তা নিশ্চিত না করলেও খুব সম্ভবত চলতি ২০২৪ সালের শেষের দিকে এটিকে একটি স্পেসক্রাফটে করে পাঠানো হতে পারে। এটিকে মূলত ডিজাইন করা হয়েছে বরফ আচ্ছাদিত এনসেলাডাস উপগ্রহের পৃষ্ঠে গিয়ে বরফের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করা এবং তার পাশাপাশি এই চাঁদের অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডের কাঠামো অন্বেষণ, বাসযোগ্যতার মূল্যায়ন এবং কোন এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করবে নাসা।
নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই এনসেলাডাস উপগ্রহের বরফ আচ্ছাদিত সারফেস কিছুটা মসৃণ এবং এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও এর বরফের চাদরের নিচে লুকিয়ে থাকা মহাসাগরের তাপমাত্রা হতে পারে প্রায় ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে নাসার ক্যাসিনি স্পেস প্রোবের পাঠানো ডাটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা মনে করেন শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস এর গভীরের মহাসাগরের তাপমাত্রা হতে পারে মাইনাস ১.০৯৫ ডিগ্রি থেকে ১.২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর এনসেলাডাস মহাসাগরের বুকে হয়ত কোন এক অজানা বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতির এলিয়েন লাইফ টিকে থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। আর ঠিক তাই শনি গ্রহের এই চাঁদের বুকে শীতল বরফের নিচে লুকিয়ে থাকা মহাসাগরের অস্তিত্ব এবং সেখানে সম্ভাব্য এলিয়েন লাইফের উপস্থিতি আছে কিনা তা নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে এই মিশন পরিচালনা করতে চায় নাসা। এই মিশন সফল করতে নাসা ইতোমধ্যেই সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে।
তথ্যসূত্রঃ নাসা, জেপিএল, অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রোবায়োলজি, স্পেস টাইম, ইউকীপিডিয়া।