মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা এক ধ্বংসাত্মক অবজেক্ট হচ্ছে ব্ল্যাক-হোল বা কৃষ্ণগহ্বর!

এই অসীম মহাবিশ্বের অত্যন্ত রহস্যময়, ধ্বংসাত্মক এবং শক্তিশালী অবজেক্ট হচ্ছে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। এ সম্পর্কে এক ধরনের ভ্রান্ত রয়েছে যে, প্রতিটি নক্ষত্র তার লাইফ টাইম সাইকেল শেষে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। কিন্তু মহাকাশ বিজ্ঞানীরা নিবিড়ভাবে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হওয়ার জন্য একটি নক্ষত্রকে আমাদের সোলার সিস্টেমের কেন্দ্রে থাকা সূর্য অপেক্ষা কমপক্ষে প্রায় ২০ গুণ বেশি ভর বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী নক্ষত্র হতে হবে।

Dec 17, 2024 - 14:09
Dec 17, 2024 - 15:25
মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা এক ধ্বংসাত্মক অবজেক্ট হচ্ছে ব্ল্যাক-হোল বা কৃষ্ণগহ্বর!
মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা এক ধ্বংসাত্মক অবজেক্ট হচ্ছে ব্ল্যাক-হোল বা কৃষ্ণগহ্বর!

আর এই ধরনের অতি ভর সম্পন্ন সুপার জায়ান্ট নক্ষত্রগুলোই মূলত তার লাইফ টাইম সাইকেল শেষে বিস্ফোরিত হয়ে এটির ধ্বংসাবশেষ নিজের মধ্যেই আবার আপতিত হতে থাকে। বিজ্ঞানীদের অনুমান করেন যে, তখন সেই সুপার জায়ান্ট নক্ষত্রের ঘনত্ব প্রায় অসীম পর্যায়ে চলে যায়। তারপর এটি তার শেষ অবস্থা বা পরিণতি হিসেবে প্রকৃতি কিংবা পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। 

সারা মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে এই অসীম মহাবিশ্বের এমন একটি রহস্যময় অবজেক্ট, যার মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে কিনা এর ভিতর থেকে অন্য কোন কিছু কিংবা বিন্দুমাত্র আলো পর্যন্ত বের হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা সাধারণত ব্ল্যাক হোলকে তাদের ভর অনুযায়ী তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছেন। যেগুলো হচ্ছে নাক্ষত্রিক-ভর, সুপার ম্যাসিভ এবং মধ্যবর্তী-ভর বিশিষ্ট ব্ল্যাকহোল। 

মহাকাশে লুকিয়ে থাকা রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোল সরাসরি শনাক্ত করার প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত উদ্ভাবন করা সম্ভব না হলেও ছায়াপথের অতি দূরবর্তী স্থানে বা কেন্দ্রের ব্ল্যাকহোলের চারপাশে থাকে ঘূর্ণায়মান গ্যাসীয় পদার্থের চাকতি, যাকে অ্যাক্রিশন ডিস্ক সৃষ্টি হয়। আর ব্ল্যাকহোল তার চারপাশ থেকে নক্ষত্র এবং গ্যাসীয় পদার্থ এবং অন্যান্য অবজেক্টকে তীব্র গতিতে নিজের ভিতর টেনে নিতে থাকে। 

তাছাড়া এর চার পাশে থাকা সকল অবজেক্ট ব্ল্যাকহোলের ভেতর পতিত হওয়ার আগে তার চারপাশে সর্পিলভাবে চাকতির আকারে ঘুরতে থাকে। তাছাড়া প্রচণ্ড বেগে ঘূর্ণন গতির কারণে ডিস্কের বস্তুসমূহের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয় এবং ঠিক এর কারণে বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি এবং ও অতি উজ্জ্বল মাত্রায় আলোক বিকিরণ সৃষ্টি করে। যাকে আবার বিজ্ঞানের ভাষায় 'কোরাসার' বলা হয়। এই 'কোয়াসার' শনাক্ত করে বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

এদিকে আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা এমনই এক সুপার ম্যাসিভ ব্লাক-হোল হচ্ছে সাগিটেরিয়াস-এ। যার ভর কিনা অবিশ্বাস্যভাবে সূর্য অপেক্ষা আনুমানিক ৪২,৯৭,০০০ গুণ বেশি হতে পারে। তবে প্রকাশ থাকে এটি কিন্তু মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিশাল আকারের এবং অতি ভর সম্পন্ন কৃষ্ণগহ্বর নয়। আসলে এর অপেক্ষা কয়েক হাজার গুণ অধিক ভর সম্পন্ন এবং সুবিশাল আকারের ধ্বংসাত্মক অবজেক্ট লুকিয়ে রয়েছে।

গত ২০২৩ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে, আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা 'স্যাগিটেরিয়াস-এ' ব্ল্যাকহোল নাকি পূর্ণ মাত্রায় ঘূর্ণায়মান রয়েছে। আর এই কারণে নাকি ব্ল্যাকহোলের আশেপাশের স্থানে খুব দ্রুত স্থান ও কালের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যে অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা 'লেন্স-থারিং এফেক্ট' নাম দিয়েছেন। এই সংক্রান্ত বিষয়ে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক রুথ ডালি বলেন যে, 'লেন্স-থারিং এফেক্টটি' ঘটে যখন একটি ব্ল্যাক হোল তার তীব্র মাত্রায় ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে স্থান-কালকে পাল্টাতে থাকে। 

তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ প্রযুক্তির ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এক অত্যন্ত শক্তিশালী আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাকহোলের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। যার অবিশ্বাস্য আকার ও ভর মহাকাশ বিজ্ঞান এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ফনিক্স-এ আল্ট্রা সুপার ম্যাসিভ ব্লাক-হোল। তাদের অনুমান মতে, এর ভর হতে পারে আমাদের সূর্য অপেক্ষা আনুমানিক ১০০ বিলিয়ন গুণ বেশি। 

অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া আরেকটি সুপার ম্যাসিভ ব্লাক-হোল টিওএন-৬১৮ এর ভর সূর্য অপেক্ষা প্রায় ৬৬ বিলিয়ন গুণ অধিক হতে পারে। ফনিক্স-এ ব্লাক-হোল বর্তমানে আমাদের সোলার সিস্টেম থেকে ৫.৮ বিলিয়ন লাইট ইয়ার দূরত্বে ফনিক্স ক্লাস্টার গ্রুপে অবস্থান করছে এবং এর ব্যাস বা ডায়ামিটার হতে পারে আনুমানিক ৩৬৬ বিলিয়ন মাইল। এই তথ্য উপাত্ত কিন্তু বিজ্ঞানীদের একটি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণামূলক প্রেডিকশন হলেও তা নিয়ে সমালোচনা করার কোন সুযোগ নেই। 

(তথ্য ও ছবি সংগৃহীত)

তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, নাসা, স্পেস ডট কম, ইভেন্ট হোরাইজন টেলিস্কোপ, ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) শিক্ষক ও লেখক, বিনগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।