সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে নাসার পাঠানো পার্কার সোলার স্পেস প্রোব!
সূর্যকে নিয়ে স্টাডি করার উদ্দেশে নাসার পাঠানো ‘পার্কার সোলার প্রোব’ আজ মঙ্গলবার সূর্যের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। নাসার দেয়া তথ্যমতে, পার্কার সোলার প্রোব এখনো পর্যন্ত সূর্যকে মোট ২১ বার প্রদক্ষিণ করেছে এবং আজ ২৪শে ডিসেম্বর করোনা বলয়ের একেবারে কাছাকাছি অঞ্চলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এই স্পেস-প্রোব আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সূর্য পৃষ্ঠের ৩.৮৬ মিলিয়ন মাইলের মধ্যে করোনা অঞ্চলে প্রবেশ করবে।
পার্কার সোলার প্রোব বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ৬ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার বা প্রতি সেকেন্ডে ১৯১ কিলোমিটার গতিতে সূর্য পৃষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা হচ্ছে কিনা আলোর গতির প্রায় ০.০৬৪% এর সমান এবং তার পাশাপাশি এটি হতে হচ্ছে মানব জাতির তৈরি সবচেয়ে দ্রুত গতির অবজেক্ট। এই স্পেস প্রোব ব্যতীত মানুষের তৈরি অন্য কোন অবজেক্ট আজ পর্যন্ত সূর্য পৃষ্ঠের এতোটা কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
আসলে এই মহাকাশযানে ইনস্টল করা অতি উচ্চ প্রযুক্তির সেন্সর দ্বারা সূর্যের করোনার রহস্যময় তাপমাত্রা নিয়ে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত ডাউনলোড করে সূর্য এবং তার রহস্যময় করোনা অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং তার অনেক অজানা রহস্য ও নতুন তথ্য উপাত্ত জানার চেষ্টা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। যাকে মহাকাশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এক মাইলফলক অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিজ্ঞানীরা নিবিড়ভাবে গবেষণা করে দেখেন যে, সূর্যের সারফেস তাপমাত্রা আনুমানিক ৫,৫০০-৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান হতে পারে। আবার সূর্যের কয়েক হাজার কিলোমিটার ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডল বা করোনার তাপমাত্রা কিনা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।
সূর্যের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও এটিকে হয়ত প্রায় ১,৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার সম্মুখীন হতে হবে। যদিও বিজ্ঞানীরা এটির তাপ ঢালকে কমপক্ষে ২,৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা সহ্য করার উপযোগী করে ডিজাইন করেছেন। তাই খুবই দ্রুত গতিতে এবং অল্প সময়ের মধ্যে এটি সূর্যকে ফ্লাই-বাই করে চলে যাওয়ার কারণে এই তাপমাত্রায় এই স্পেস প্রোবের তেমন কোন ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাছাড়া এটিকে আসলে একটি ১১.৫ সেন্টিমিটার পুরু কার্বন-কম্পোজিট শিল্ড দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে।
গবেষকদের ধারণা মতে, সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনা তীব্র মাত্রায় গরম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সূর্যের নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। যদিও সূর্যের করোনার এত তীব্র মাত্রায় তাপমাত্রা হওয়ার মূল রহস্য এখনো পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি তাঁরা। আর সূর্যকে নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণার উদ্দেশ্যে গত ১২ই আগস্ট ২০১৮ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ৬৮৫ কেজি ওজনের ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামের স্পেস মিশন লঞ্চ করে করে নাসা।
এ সময় পার্কার সোলার স্পেস প্রোব পৃথিবী থেকে সূর্যের মোট দূরত্বের প্রায় ৯৬% পথ অতিক্রম করে সূর্যের করোনা অঞ্চলের কাছে দিয়ে চলে যাবে। তাছাড়া এই মিশন চলাকালীন সময়ে নাসার কমান্ড সেন্টারের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারবে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি সৌর প্লাজমার ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে উড়ে যাবে এটি। এমনকি এটি হয়ত সূর্যের একেবারে সক্রিয় অঞ্চলের মধ্যেও ঢুকে যেতে পারে।
আর এই মিশন চলাকালে এটি তীব্র তাপমাত্রায় টিকে আছে না গলে গেছে সে তথ্য জানতে আগামী তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে নাসাকে। নাসা জানিয়েছে যে, এই যাত্রায় পার্কার সোলার প্রোব টিকে গেলে আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের যে কোন সময় তার তোলা ছবি এবং সংগৃহীত ডাটা নাসার কমান্ড সেন্টারে পাঠাতে পারে। যা থেকে সূর্য ও তার চৌম্বক ক্ষেত্র-সহ আরও নানা বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সূর্য সম্পর্কে আরো গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে চান বিজ্ঞানীরা।
পার্কার সোলার স্পেস প্রোব ডিজাইন ও তৈরি করে নাসার সাথে যৌথভাবে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরি। আর এটি তৈরি করতে আমেরিকা প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। তাছাড়া এই মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র অগ্রগামী জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ইউজিন পার্কার এর নামে। তিন সর্বপ্রথম সৌর বায়ুর অস্তিত্বের থিওরি উপস্থাপন করেন। তিনি ২০২২ সালে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান।
তথ্যসূত্র:- নাসা, উইকিপিডিয়া, স্পেস ডট কম, এনবিসি নিউজ। ।