এলিয়েন লাইফের খোঁজে এবার 'ইউরোপা' উপগ্রহের উপর বিজ্ঞানীদের নজর!

আমাদের সোলার সিস্টেমে একমাত্র পৃথিবীতেই জীব জগৎ কিংবা জটিল প্রাণের বিকাশ সাধিত হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, সুবিশাল মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অন্য কোন গ্রহ কিংবা উপগ্রহের বুকে লুকিয়ে থাকতে পারে এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত আমাদের সোলার সিস্টেমে কিংবা এর বাহিরে এলিয়েন লাইফের বাস্তব কোন প্রমাণ কিংবা অস্তিত্বের কোন চিহ্ন খুঁজে পাননি।

Oct 6, 2024 - 10:35
এলিয়েন লাইফের খোঁজে এবার 'ইউরোপা' উপগ্রহের উপর বিজ্ঞানীদের নজর!

মহাকাশ বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সোলার সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, জুপিটার গ্রহের অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপা এবং শনি গ্রহের উপগ্রহ এনসেলাডাসের সারফেসের গভীরে হয়ত লুকিয়ে থাকতে পারে জটিল কোন এলিয়েন লাইফ। যা নিয়ে গত বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও এ সংক্রান্ত গবেষণায় সফলতার হার ০% হলেও তাঁরা কিন্তু এখনও পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেননি।

আসলে ৩,১০০ কিলোমিটার ব্যাসের শীতল বরফের চাদরে আচ্ছাদিত ইউরোপার উপগ্রহের সারফেস তাপমাত্রা গড়ে মাইনাস -১৬০ ডিগ্রি। এটি সুর্য থেকে প্রায় ৫.২ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল (এইউ) ইউনিট দূরত্বে অবস্থান করে জুপিটার গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে। আর এর ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন এর প্রায় ১০০ মাইল পুরুত্ব কঠিন বরফের গভীরে হয়ত লুকিয়ে থাকতে পারে সুবিশাল এক ভাসমান মহাসাগর। 

এই উপগ্রহের সারফেস অতি শীতল ও কঠিন বরফের চাদরে ঢাকা থাকলেও এর বুকে লুকিয়ে থাকা মহাসাগরের তাপমাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে মাইনাস ১ ডিগ্রি কিংবা তার চেয়েও কিছুটা বেশি উষ্ণ হতে পারে। যা কিনা এখানে মজুত থাকা পানি তরল অবস্থায় থাকার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে বৃহস্পতির অনেকটাই নৈকট্য ও শক্তিশালী গ্রাভেটিশনাল ফোর্সের কারণে ইউরোপার গভীরে ব্যাপক আকারের জোয়ার সৃষ্টির সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। 

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট ইউরোপা সিলিকেট শিলা দিয়ে গঠিত। তাছাড়া খুব সম্ভবত এর একটি সক্রিয় লোহা-নিকেল কোর রয়েছে। ইউরোপার একটি খুবই পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে। যার হয়ত বেশির ভাগ মূলত অক্সিজেন দ্বারা গঠিত। তাছাড়া এর সারফেস পুরোটাই শক্ত ও শীতল বরফের চাদরে আচ্ছাদিত রয়েছে। গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘জুনো’ স্পেস প্রোব ইউরোপা উপগ্রহকে মাত্র ৩২০ কিলোমিটারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় এটিকে নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

বিজ্ঞানীরা ইউরোপা কিংবা এনসেলেডাসের মতো উপগ্রহের বুকে পানির ব্যাপক উপস্থিতি এবং এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী হলেও বাস্তবে কোন প্রমাণ তাদের হাতে এখনো পর্যন্ত আসেনি। তাছাড়া এই উপগ্রহকে নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন এবং অত্র অঞ্চলে এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ক্লিপার স্পেস-প্রোব চলতি ২০২৪ সালের ১০ই অক্টোবর লঞ্চ করা হবে। 

এদিকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এর পাঠানো জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (জুস) স্পেস মিশন লঞ্চ করা হয় গত ২০২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল। জুপিটার গ্রহ এবং তার তার তিনটি উপগ্রহকে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে এই স্পেশাল ‘জুস’ স্পেস প্রোব মিশন লঞ্চ করে (ইএসএ)। যা মূলত আগামী ২০৩০ কিংবা ২০৩১ সালের দিকে জুপিটার গ্রহসহ এবং এর তিনটি বড় উপগ্রহ (গ্যানিমেড, ক্যালিস্ট ও ইউরোপা) অনেকটাই কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে এদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত পৃথিবীতে পাঠাবে। 

তথ্যসূত্রঃ ইউকীপিডিয়া, নাসা সায়েন্স, স্পেস ডট কম, দ্য প্ল্যানেটরী সোসাইটি।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.