এক নতুন ভয়ংকর আউটার স্পেস ওয়ারের মুখে বিশ্ব!

জার্মানির 'ডাব্লিউইএলটি' নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন দাবি করেছে যে, রাশিয়া মহাকাশ থেকে ন্যাটো জোটের দেশগুলোর উপর কিলার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিউক মিসাইল হামলা চালাতে পারে। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাশিয়া নাকি ইতোমধ্যেই গোপনে বেশকিছু সংখ্যক নিউক্লিয়ার কিংবা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিভ পালস (ইএমপি) অস্ত্র সমৃদ্ধ "কিলার স্যাটেলাইট" পৃথিবীর আউটার স্পেসে পাঠিয়েছে।

Sep 11, 2024 - 01:38
এক নতুন ভয়ংকর আউটার স্পেস ওয়ারের মুখে বিশ্ব!

যার মাধ্যমে রাশিয়া আউটার স্পেস থেকে সরাসরি ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে এক অভিনব ভয়ংকর স্পেস ওয়ার শুরু করতে পারে। তার পাশাপাশি চীনও নাকি রাশিয়ার সাথে সমন্বয় করে গোপনে পৃথিবীর আউটার স্পেসে সন্দেহজনক সামরিক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আমেরিকা। যাকে ১৯৬২ সালে করা ইন্টারন্যাশনাল আউটার স্পেস ট্রিটির সরাসরি লংঘন বলে মনে করে ন্যাটো জোট।

এদিকে ভবিষ্যতের জন্য স্পেস ওয়ারের সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন নিজেদের আউটার স্পেস ফোর্স গঠন শুরু করে দিয়েছে। আর এই নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এখন কিনা এই তিন দেশের মধ্যে একদিকে আমেরিকা এবং অপর দিকে রাশিয়া ও চীন যৌথভাবে নিজেদের স্পেস ফোর্স গঠন করে একে একে নতুন প্রযুক্তির অজানা সংখ্যক মিলিটারি স্যাটেলাইট গোপনে পৃথিবীর অরবিটে বা আউটার স্পেসে প্রেরণ করে সারা বিশ্বকে নতুন এক ভয়াবহ স্পেস ওয়ারের মুখে ফেলে দিয়েছে।

বিশেষ করে গত ২০২২ সালে থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই  প্রভাবশালী দেশগুলো  মহাকাশে সামরিক স্যাটেলাইট বা অস্ত্র প্রেরণের নিষেধাজ্ঞার আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আইন অমান্য করেই নিজেদের মতো করে স্পেস ওয়ারের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাশিয়া এবং চীন নাকি অত্যন্ত গোপনে অজানা সংখ্যক সন্দেহজনক কিলার স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে বলে মনে করে আমেরিকা।

এদিকে চীন ও রাশিয়ার আউটার স্পেসে মিলিটারি কার্যক্রম গভীরভাবে নজরদারি করার জন্য গোপন মিশনে রহস্যময় মহাকাশযান এক্স-৩৭বি প্রেরণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। মহাকাশে আসন্ন ভয়ংকর নিউক্লিয়ার কিংবা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিভ পালস (ইএমপি) এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্পেস ওয়ারকে সামনে রেখে রাশিয়া এবং চীন কি ধরনের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার উপর গোপন নজরদারি করাই এই স্পেস যানের মূল লক্ষ্য।

মহাকাশে চীন ও রাশিয়া গোপনে স্পেস ওয়ারের প্রস্তুতি হিসেবে অজানা গোপন কোন উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক অবজেক্ট পাঠিয়েছে বলে আমেরিকা মিডিয়ায় বার বার অভিযোগ করে গেলেও বাস্তবে তাদের অতি উচ্চ প্রযুক্তির মহাকাশ যান এক্স-৩৭বি আসলে ঠিক কোন ধরনের স্পেস মিশন পরিচালনা করে তা নিয়ে কিন্তু আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন, পেন্টাগন এবং তাদের নিজস্ব মিডিয়ায় টু শব্দটিও করে না।

আসলে গত ২০১৮-১৯ সালের দিকে চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি আমেরিকা নিজেদের জন্য হাই প্রোফাইল 'মহাকাশ বাহিনী' গঠনের কাজ শুরু করে। ভবিষ্যতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশেও মোতায়েন করবে দেশটির উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনা ইউনিট। আর কয়েক বছর আগেই মহাকাশ বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্রের হাউস আর্মড সার্ভিস কমিটি। তাদের সামরিক বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশে বা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে গোপন সামরিক মিশন পরিচালনা করবে এবং প্রয়োজনে শত্রু দেশের বিরুদ্ধে মহাকাশ থেকেই যুদ্ধ করবে।

তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেন যে, চীন, রাশিয়া এবং আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার দেশের নতুন করে মহাকাশ দখলের যে ভয়ংকর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তার ফলে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের পৃথিবী এবং এখানে বসবাসকারী মানব জাতি। তাছাড়া পৃথিবীর অরবিটে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে ক্ষতিকর রেডিয়েশন, স্পেস জাঙ্ক বা মিলিয়ন মিলিয়ন আবর্জনা। তার সাথে ভবিষ্যতে মানুষের হাতে থাকা পরমাণু, রসায়নিক ও জৈব অস্ত্র গোপনে পৌঁছে যেতে পারে পৃথিবীর আউটার স্পেসে।

এদিকে মহাকাশে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যেই অজানা সংখ্যক মিলিটারি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন। যার মধ্যে আনুমানিক দুই শতাধিক মিলিটারি স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে আমেরিকা। তাছাড়া রাশিয়া প্রায় শতাধিক এবং চীন প্রায় অর্ধশতাধিক মিলিটারি বা স্পেশাল মিশনের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির মহাকাশ যান পাঠিয়ে মহাকাশ দখলের এক অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে।

একাধিক সামরিক গবেষণামূলক থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, বিশ্বের তিনটি প্রভাবশালী দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই কিন্তু স্পেস ওয়ার শুরু হয়ে গেছে। এই প্রতিযোগিতায় একদিকে আমেরিকা এবং অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন যৌথভাবে অবস্থান করছে। আর এই অশুভ স্পেস ওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা হয়ত চলতে থাকবে আরো প্রায় অর্ধ শতাব্দী ব্যাপী। যার বিরুপ প্রভাব পরোক্ষভাবে হলেও বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে সারা বিশ্ববাসীকে।

এমনও হতে পারে যে, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের প্রভাবশালী সামরিক সুপার পাওয়ার দেশগুলো হয়ত তাদের ভান্ডারে মজুত থাকা অতি ভয়ংকর নিউক্লিয়ার কিংবা বায়োলজিক্যাল ওয়ারহেড গোপনে মহাকাশে মোতায়েন শুরু করবে কিংবা তার হয়ত গোপনে এই অপকর্ম ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। যদিও বাস্তবে এখনো পর্যন্ত বিষয়টি যে এতটা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা অবশ্য বলা যাবে না। 

সূত্র: ডাব্লিউইএলট, ইউকীপিডিয়া, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এনসিবি নিউজ, স্পেস নিউজ, সিএনএন।

লেখক : সিরাজুর রহমান, (Sherur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.