দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৭ম বাংলাদেশ রোবটিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৪!

শত প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এবার দেশে সপ্তম বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২৪।

Sep 6, 2024 - 22:21
Sep 7, 2024 - 01:21
দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৭ম বাংলাদেশ রোবটিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৪!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর রোবট অলিম্পিয়াডে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সবার আগে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যা কিনা ভবিষ্যতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ দক্ষ ও আগ্রহী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

আসলে আমাদের দেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ আগ্রহী করে গড়ে তুলতে এই ধরনের সুন্দর ও সৃজনশীল আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মোট কথা যে ভাবেই হোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলো সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। টেকসই অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের প্রথমেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তির প্রতি প্রবল আগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বিগত এক দশক থেকেই বৈশ্বিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ম্যাথ, ফিজিক্স এবং রোবটিক্স অলিম্পিয়াডে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যেই দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। দেশে সৃষ্টি হয়েছে অদম্য মনোবলের অধিকারী মেধাবী শিক্ষার্থী ও প্রযুক্তিবিদ। তবে আমাদের দেশের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন কিংবা চাহিদার তুলনায় এটা খুবই সীমিত অর্জন বলেই আমি মনে করি।

আর হতাশাজনক হলেও সত্য যে, বাস্তবে আমাদের দেশে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণ ও উন্নয়নে সেভাবে কিন্তু এগিয়ে যেতে পারিনি। তাছাড়া ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে একেবারে বাস্তবে ব্যবহার যোগ্য এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তা শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু হয়েছে এমন কোন নজির খুঁজে দুষ্কর। তবে এটা ঠিক যে, এর কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আমাদের দেশে রয়েছে।


অথচ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শামিল হতে চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো দেশগুলো বেশ সাবলীলভাবেই ইনোভেটিভ আইডিয়া অ্যাপ্লাই এবং নতুন প্রযুক্তি অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও কিন্তু তাদের সাথে তাল মিলিয়ে একেবারে বাস্তবে ব্যবহার যোগ্য নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং ইনোভেটিভ আইডিয়ার সিস্টেম নিয়ে গবেষণা, ডিজাইন ও তৈরিতে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।



তাছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমরা কিন্তু জনবহুল চীন, তুরস্ক ও ইরানের মতো দেশে প্রচলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা, পদ্ধতি ও মডেল যতটা সম্ভব অনুসরণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে চেষ্টা করে দেখতে পারি। হয়ত আগামী এক দশকে আমরাও নিজস্ব ডেডিকেটেড টেকনোলজি নিয়ে উন্নত বিশ্বের সাথে সীমিত পরিসরে হলেও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হব। যেখানে চীনের মতো দেশ একেবারে শূন্য থেকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকেই বাস্তব জীবন নির্ভর কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে পর্যায়ক্রমে আজ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরাশক্তি ও প্রযুক্তি হাবে পরিণত হয়েছে।



তাছাড়া সারা বিশ্বে বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সারা পড়ে গেলেও বাস্তবে এক্ষেত্রে আমরা কিন্তু একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নিজস্ব প্রযুক্তির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সফল প্রয়োগ কিংবা ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। সেখানে আমরা কিনা প্রযুক্তি প্রাপ্তি ও ব্যবহারের জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রয়েছি।


এক্ষেত্রে শুধু সনদ, পদক এবং সম্মান অর্জন করাটা এখানে মোটেও মুখ্য বিষয় হতে পারে না। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ কিন্তু ইতোমধ্যেই বিশ্ব মানের মেডিসিন, কৃষি এবং মৎস্য সেক্টরে গবেষণা ও উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জন করেছে। তা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য একটি ইতিবাচক ও গর্বের বিষয়। তবে তার ধারাবাহিকতা কিন্তু অন্য কোন সেক্টরে বিশেষ করে রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এআই টেকনোলজি, স্পেস সায়েন্স, সেমিকন্ডাক্টর, অটোমোবাইলস এন্ড এভিয়েশন সেক্টরে খুব একটা চোখে পড়ে না। আর এই হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে আমাদের যে কোন ভাবেই হোক না কেন অবশ্যই বেড়িয়ে আসতে হবে।

লেখক: সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।

Sherazur Rahman (সিরাজুর রহমান) Assistant Teacher and Writer, Singra, Natore, Bangladesh.